তুলসী গাছের পাতার উপকারিতা - তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা নানা রোগের চিকিৎসা করা হয়। সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। সুগন্ধ বৈশিষ্ট্য তুলসী গাছের পাতার দ্বারা মানুষের ডায়াবেটিস দূরে থাকে, ত্বকের উন্নতি করে, তুলসী গাছের পাতার দ্বারা ওজন কমানো যায় এছাড়াও আরো নানান মারাত্মক রোগের প্রতিরোধ করে তুলসী গাছের পাতা। 
তুলসী গাছের পাতার উপকারিতা - তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য
বন্ধুগণ আপনি যদি তুলসী গাছের পাতার উপকারিতা এবং তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য এ সকল তথ্য খোঁজে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন তাহলে অবশ্যই পুরো ধারণা পেয়ে যাবেন। 

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা ডায়াবেটিস দূরে থাকে

ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য তুলসী গাছের পাতার ব্যবহার করা বিশেষ প্রয়োজন। তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার স্তার সঠিক মাত্রাই রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে তুলসী গাছের পাতার রস বা যেকোন প্রক্রিয়ায় খাওয়ার ফলে ডায়াববেটিস -২ কমাতে সাহায্য করে। নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের টাইপ ২ ছোট্ট পরীক্ষা করা হয়।
রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ কে খেতে বলা হয় ডায়াবেটিসের ঔষধ, বাকি রোগীদেরকে দেওয়া হয় ২৫০ মিলিগ্রাম তুলসী ক্যাপসুল। পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে ওষুধের ওপর নির্ভর না করে তুলসী গাছের পাতা রক্তের শর্টকাট নিয়ন্ত্রণে রাখে।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা ত্বকের উন্নতি করে

তুলসী পাতার মধ্যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটর বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তুলসী গাছের পাতার দ্বারা আপনার মুখের ব্রণ, ব্রণের দাগ, লালচে ভাব, ব্রণের ব্যথা ইত্যাদি কমাতে অনেক উপকার করে। তুলসী পাতা এবং নিমপাতা একসাথে বেটে নিয়ে তাতে এক চিমটে হলুদ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।
তারপর ত্বকের উপর মাখিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধুয়ে ফেলুন এরকম করে ৭ থেকে ১০ দিন ব্যবহার করুন তাহলে ব্রণের দাগ অবশ্যই মুছে যাবে এবং আস্তে আস্তে আপনার ত্বকের সুন্দর চেহারার অধিকার লাভ করবেন।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা ওজন কমানো যায় 

গবেষণায় প্রমাণিত রোজ সকালে আপনি ৭ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাবেন এতে আপনার শরীরেকে বিষমুক্ত রাখবে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। তুলসী চা দিয়ে আপনার দিন শুরু করতে পারেন।
বেশ কিছু তুলসী পাতা ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে পরিমাণ মত জলে ডুবিয়ে রাখুন সারারাত সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই ওই জল পান করুন।এইরকম করে ৮ থেকে ১০ দিন খাবেন তাহলে অবশ্যই আপনার ওজন করতে শুরু করবে। 

তুলসীগাছের পাতার দ্বারা জ্বর ভালো হয় 

ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর ভালো করতে পারবেন। জ্বর এর জন্য বেশ উপকারী তুলসী গাছের পাতা। কয়েকটি তুলসী পাতা অল্প কয়টা গোল মরিচ পরিমাণ মতো মিশ্রি এবং পরিমাণ মতো জল নিয়ে সিদ্ধ করুন। উক্ত জুস জ্বর থাকা অবস্থায় দিনে দুইবার করে খাবেন।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা সর্দি কাশি কমিয়ে দেয়

আমাদের শরীরে বেশি ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশি হবে এটাই স্বাভাবিক। যদি কারো বুকে কফ জমে তাহলে তাকে প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতা, আদা, ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তাকে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেতে হবে। এভাবে খাওয়ার ফলে সর্দি কাশি কফ ভালো হয়ে যায়।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে

তুলসী পাতা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে ওই জল গলায় দিয়ে গোলগল করলে এতে মুখ ও গলার সকল রোগ জীবাণু মরে যাবে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে। ৫ থেকে ৭ টি পাতা মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেলে এতে মুখের রুচি বাড়ে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

কিডনির পাথর চিকিৎসাই তুলসী পাতা 

ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিডনির পাথর একেবারে ফিনিশ করে দিতে পারবেন। প্রতিদিন একগ্লাস করে তুলসী পাতার রস খাবেন এতে আপনার কিডনিতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদি কিডনিতে পাথর জমে যায় সেই ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিদিন একগ্লাস করে তুলসী পাতার রস টানা ছয় মাস খেতে হবে তাহলে স্টোন মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যাবে।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা হার্টের উপকার হয়

হার্টের রোগীর জন্য তুলসী গাছের পাতার ভূমিকা অপরিসীম। তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন সমস্যা থেকে হার্টকে মুক্ত রাখার জন্য এই উপাদান ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ প্রয়োজন যা তুলসী গাছের পাতায় রয়েছে। আন্টি অক্সিডেন্ট গুলি ফ্রি র‍্যাডিক্যাল এবং লিপিড সামগ্রী ক্ষতিকারক কোলেস্টরলের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা পোকামাকড় তাড়ায়

তুলসী গাছ বাড়িতে থাকলে ছোট ছোট পোকামাকড় খুব কম আসে। তুলসী গাছের কাছে গেলে দেখবেন সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যায়, এই ঘ্রাণ ছোট ছোট মশা তাড়াতে বেশ উপকারী। মশা পূর্ণ বয়স্ক হওয়ার আগেই মশার লার্ভা কে মেরে ফেলে। তুলসী গাছে রয়েছে নির্যাসের লার্ভিসাইডাল বৈশিষ্ট্য।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা গলা ব্যথা দূর করে

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা গলা ব্যথা দূর করা যায়, একটি পাত্রে কয়েকটি তুলসী পাতা কুচি কুচি করে কেটে নিয়ে অল্প পরিমাণে জল দিয়ে আগুনে দিয়ে ফুটিয়ে নিন। অল্প করে ফুটিয়ে নেওয়ার পর সেই তুলসী চা মুখের মধ্যে নিয়ে গলায় গলগল করুন কিছুক্ষণ। গলায় দিয়ে গলগল করতে হবে বেশ কয়েকবার তাহলে আপনার গলার ব্যথা ভালো হবে।

তুলসী গাছের পাতার দ্বারা ধর্মীয় গুরুত্ব

হিন্দু ধর্মে তুলসী গাছের ভুমিকা অপরিসীম। হিন্দুদের প্রতিটি বাড়িতে নিদিষ্ট স্থানে রয়েছে তুলসী গাছ, সেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যাই পূজা আরর্চনা করা হয়। বিশেষ করে নিজ নিজ গৃহের মহিলাদের ভক্তির একটা কেন্দ্র তুলসী গাছ। তুলসী গাছে রয়েছে লহ্মী দেবি এবং সিকরে রয়েছে স্বয়ং বিষ্ণ। তুলসী গাছের পাতা হচ্ছে পবিত্র পাতা প্রতিটি মন্দিরের রোপন করা থাকে তুলসী গাছ।
হিন্দু শস্ত্রে বলা হয়েছে তুলসী পাতা ছাড়া পূজা সম্পর্ন হবে না। তুলসী গাছের সিকরে রয়েছে স্বয়ং বিষ্ণ দেব, উপরের অংস টুকু ফেলে দিয়ে সুধু শিকর এর অংস বাড়িতে রাখবেন এতে আপনার সংসারের মঙ্গল ঘটবে।

তুলসী গাছের বৈশিষ্ট্য

তুলসী গাছ ঘন শাখা বিশিষ্ট ২ - ৩ ফুট উঁচু শত শত রোগের প্রতিরোধকারী গাছ। তুলসী গাছ এর মূল কান্ড ২ - ৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এটি সুগন্ধি, দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়া জুড়ে এই গাছ রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে তুলসী গাছ আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
শাখা প্রশাকার অগ্রভাগ হতে ৫ টি পুষ্পদগু থাকে।প্রতিটি পুষ্পদগুতে ১০ থেকে ১৫ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬ টি করে ছোট ভুল ফোটে।

শেষ কথা 

তুলসী গাছের পাতার অবদান ও পরিসীম শত শত রোগের চিকিৎসা হয় তুলসী গাছ এর পাতা দ্বারা। সুস্থ থাকতে হলে আপনি প্রতিদিন পাঁচ থেকে দশটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাবেন এতে আপনার শরীরের পক্ষে অনেক উপকার হবে। গবেষণায় প্রমাণিত অনেক বড় বড় রোগের চিকিৎসা হয় তুলসী গাছের পাতা দিয়ে।
বন্ধুগণ আজকের আমার এই আর্টিকেল যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে শেয়ার করবেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল জানতে চাইলে simaait সীমা আইটির সাথে থাকবেন। আপনার কোন মতামত থাকলে বা পরবর্তীতে আপনি কেমন ধরনের আর্টিকেল পেতে চান অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url