যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক - অহংকার নিয়ে গীতার বাণী
ভূমিকা
নমস্কার আমার নাম শুভ কুমার প্রামানিক। আমাদের হিন্দু ধর্মে গীতার ১৮ টি অধ্যায়
রয়েছে তার মধ্যেই গীতার শ্লোক অন্যতম। আমাদের সকলেরই গীতা শ্লোক মুখস্ত এবং
ঠোটস্ত জেনে থাকা প্রয়োজন। আমি আজকে আপনাদের মাঝে যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার
শ্লোক, অহংকার নিয়ে গীতার বাণী নিয়ে আজকের আর্টিকেল তৈরি করছি।
পোস্ট সূচিপত্রঃপ্রিয় পাঠক আপনি যদি যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক এবং শ্রী কৃষ্ণের বাণী খুজে
থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আপনি সঠিক জায়গাতে আসছেন। আশা করা যায় সীমা
আইটি ওয়েবসাইটে থেকে সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য পাবেন। এজন্য আপনাকে প্রথম থেকে শেষ
পর্যন্ত পড়তে হবে তো চলুন শুরু করা যাক আজকের আর্টিকেল।
যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক
আমরা এখন যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক সম্পর্কে কিছু কথা জানবো। গীতা ৭০০টি
শ্লোক নিয়ে ১৮ টি অধ্যায়ে বিভক্ত হয়েছে। অনেকেই জানতে চাই, যদা যদা হি ধর্মস্য
এটা কোন শ্লোক? যদা যদা হি ধর্মস্য এটা গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ৭ নম্বর শ্লোক।
চতুর্থ অধ্যায়ের নাম হচ্ছে জ্ঞানযোগ। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক জ্ঞানযোগ এর ৭
নম্বর শ্লোক যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক।
যদা যদা হি ধর্মস্য
গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং
সৃজম্যহম্ ।।
পরিত্রাণায় সাধুনাং
বিনাশয় চ দুস্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায়
সম্ভবামি যুগে যুগে।।
(গীতা ৪/ ৭-৮)
যখনই ধর্মের অধঃপতন এবং অধর্মের উদ্ভব হয়, তখনই সাধুদের পরিত্রাণ, দুষ্ট লোকের
বিনাশ এবং ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য আমি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হই। গীতা আমাদের
অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার প্রেরণা দেয়। কারণ স্বয়ং ভগবানই যুগেযুগে দুষ্টের
দমন, শিষ্টের পালন এবং ধর্মরক্ষার জন্য পৃথিবীতে অবতারুপে নেমে আসেন।
যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ সহ
প্রিয় পাঠক এখন আমরা আলোচনা করব যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক বাংলা অর্থ
সহ। গীতার এই জ্ঞানযোগ্য শ্লোক বাংলা অর্থ দিয়ে ভেঙ্গে দেয়া
হবে উক্ত আর্টিকেলে, আপনারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন
তাহলে গীতার চতুর্থ অধ্যায়ের ৭ নম্বর শ্লোক যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার
শ্লোক বাংলা অর্থ সহকারে শুরু করা যাক।
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজম্যহম্ ।।
বাংলা অর্থঃ হে ভারত, যখনই ধর্মের
অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশয় চ দুস্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
বাংলা অর্থঃ সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুস্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য এবং ধর্ম
সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
অহংকার নিয়ে গীতার বাণী
অহংকার পতনের মূল কারণ। এই পৃথিবীতে সবচাইতে বড় শত্রু হলো অহংকার, অহংকার
মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। ঈশ্বর প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করে দেয়। অনকর আপনার মহৎ
কাজে বাধা উৎপন্ন করে, তাই অহংকার মানুষকে ধ্বংস করার আগেই অহংকারকেই ধ্বংস করা
উচিত। একটা আর্টিকেলে অহংকার নিয়ে গীতার বাণী আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।
অহংকার নিয়ে গীতার বাণী তে যখন অর্জুনের মধ্যে অহংকার আসে অর্জুন তখন তৃলোকে
সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুকধার বলে মনে করে। এইজন্য অর্জুনকে অহংকার থেকে মুক্ত করার জন্য
শ্রী বিষ্ণদেব হনুমান কে পাঠালেন। হনুমান রাম সেতুর ধারে বসে থেকে ধ্যান করছিলেন,
এমন সময় অর্জুনের সেই রাম সেতুর পাস দিয়ে যাচ্ছিলেন। হনুমানকে ধ্যান করতে দেখে
বলেন আপনি কে?
হনুমান তখন বলেন আমি একজন রামভক্ত। অর্জুন তখন জিজ্ঞাসা করেন রাম একজন
সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুকধারী ছিলেন, তিনি কেন তার বান দিয়ে তৈরি করা সেতু ব্যবহার
করেননি? কেন পাথর দিয়ে কেন সেতু তৈরি করলেন? হনুমান তখন বললেন প্রভু শ্রী রাম এর
হাজার হাজার বানর সেনা ছিল। সেই বান দিয়ে তৈরি করা সেতু সেনাদের ভার সহ্য করতে
পারবে না।
সেই কারনেই প্রভু শ্রী রাম পাথর দিয়ে সেতু তৈরি করেছে। এই কথা অর্জুন শোনার পর
হাসতে শুরু করে। বলে আমি তৃলোকের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুকধারী, আমার বান দিয়ে তৈরি করা
সেতু কখনোই ভাঙতে পারবেনা। এই কথার দ্বারা অর্জুনের মধ্যে অহংকার নিয়ে গীতার
বাণী উল্লেখিত। তখন হনুমান বললেন তোমার তৈরি করা সেতু আমি একাই ভেঙ্গে ফেলবো।
এই কথা শুনে অর্জুনের খুব রাগ হয় এবং হনুমানকে বলে ঠিক আছে তুমি যদি আমার বান
দিয়ে তৈরি করা সেতু ভেঙে দাও তাহলে আমি তোমার দাস হব আর যদি ভাঙতে না পারো তাহলে
তুমি আমার দাস হবে। হনুমান তখন রাজি হয়ে গেল, অর্জুন তার বান দিয়ে সেতু তৈরি
করল। হনুমান সেই সেতুতে পা দিতেই সেতু ভেঙ্গে গেল।
তাই দেখে অর্জনের এতদিনের অহংকার ভেঙ্গে গেল। হনুমান অর্জুনকে বললেন হে অর্জুন
তুমি তোমার অহংকারের জন্য অনেক বড় পাপ করেছ। আর সেটা হলো প্রভু শ্রী রাম কে
অপমান করেছো। অর্জুন তখন বুঝতে পারলো সে অহংকার এর জন্য কত বড় পাপ করেছে সে।
অর্জন তখন তার বান দিয়ে আগুন তৈরি করেছে নিজেকে অগ্নি দেবতার কাছে আত্মসমর্পণ
করবে বলে।
এমন সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রকট হয়ে অর্জনকে বাধা দেয়। শ্রীকৃষ্ণ অর্জনকে বলে এ
অর্জুন তোমার অহংকার বধ করার জন্য আমি হনুমান কে পাঠিয়েছি। তোমাকে কুরুক্ষেত্রে
যুদ্ধ করতে হবে আর সেই যুদ্ধে তোমাকে জয়ী হতে হবে। তুমি তোমার অহংকার নিয়ে
কখনোই যুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবে না। এজন্য তোমার অহংকারকে নষ্ট করা প্রয়োজন
ছিল।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের গীতার এই বাণী থেকে আমরা এই শিক্ষা পায় যে, মনে অহংকার থাকলে
আমরা কখনোই কাজে সফল হতে পারবো না। এর জন্য জীবনের সফল হতে গেলে অহংকারকে মন থেকে
ত্যাগ করতে হবে। এই ছিল অহংকার নিয়ে গীতার বাণী।
শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- তোমার জীবনে তুমি কর্ম করে যাও ফলের আশা করো না। শ্রী কৃষ্ণের বাণী।
- তোমার মনকে স্থির করার জন্য শক্তি, ভদ্রতা, নীরবতা, আত্মসংযম এবং পবিত্রতা শিক্ষা এইগুলো গ্রহণ করা অবশ্যই প্রয়োজন। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- একটি মানুষের জন্মের সাথেই মৃত্যু নির্ধারিত রয়েছে, তাই নিজের কর্ম চালিয়ে যাও, যে অনিবার্য তার জন্য কোন দুঃখ করো না। শ্রী কৃষ্ণের বাণী।
- জীবনের লক্ষ্য স্থির রাখা প্রয়োজন কারণ লক্ষ্য লক্ষহীন জীবন মানুষকে ভুল পথে চালিত করে। শ্রী কৃষ্ণের বাণী।
- স্বপ্ন আর লক্ষ্য একই মনে হয়, এই দুয়েরি কথা মানুষ কল্পনা করে। এই দুইটি জিনিস মানুষ অর্জন করতে জানে। এক দুইটি জিনিস পূর্ণ হলে মানুষ অত্যন্ত ভাগ্য বলে মনে করে। কিন্তু এই দুইটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, স্বপ্নের জন্য বিনা পরিশ্রমে ঘুম দরকার হয়, আর লক্ষ্যের জন্য বিনা ঘুমিয়ে পরিশ্রম। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- একটি মানুষের জীবনে সময় হল মূল্যবান বা সর্ব শক্তিমান, এইযন্য সময় কখনো নষ্ট করো না। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- যা হয়েছে তা ভালই হয়েছে, যা হচ্ছে তা ভালোই হচ্ছে, না হবে তা ভালই হবে তাই ভবিষ্যতে কি হবে তাই নিয়ে ভেবে লাভ নেই বর্তমান পরম আনন্দে বাচতে শেখ। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- ইচ্ছে সিদ্ধান্ত আর নিশ্চয়তা এই শব্দগুলো আমাদের জীবনে অনেক বার শুনেছি। জীবনে অনেক সময় অনেক কিছু পেতে ইচ্ছা করে কিন্তু ইচ্ছে করলে সব কিছু পাওয়া যায় না। জীবনে কোন ইচ্ছে করবেন না সিদ্ধান্ত নিন, আর তারপর নিশ্চিত করুন শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- আনন্দের মূল চাবিকাঠি হল ইচ্ছে হ্রাস, একজন মানুষ তার বিশ্বাস দ্বারা তৈরি হয়। যেমন সে বিশ্বাস করে তাই সে মানুষের মাধ্যমে ইচ্ছে হ্রাস রয়েছে। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- লোক ক্রোধ হিংসা হলো মানুষের প্রধান শত্রু যা নিজের অজান্তে জীবনের সবচেয়ে বেশি মূল্যবান জিনিস সময়ের ক্ষতি করে, কারণ সময় হলো পরম ক্ষমতার যা কারুর জন্য থেমে থাকে না। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- একটি মানুষের কামনা এবং বাসনাই হলো প্রভূত দুঃখের প্রধান কারণ। শ্রী কৃষ্ণের বাণী।
- বিবেক ও বুদ্ধি হলো মানুষের পরম সম্পদ যা সঠিক সময় জীবনে সঠিক দিশা বেছে নিতে সাহায্য করে। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- প্রজ্বলিত অগ্নি যেমন জ্বালানি কাঠ কে কাইতে পরিণত করে ঠিক একই ভবে আমাদের জ্ঞান আলো আমাদের মনের মধ্যে থাকা আত্ম অহংকার কে ছাইতে পরিণত করে। শ্রী কৃষ্ণের বাণী
- জীবনে কিছু করে দেখাতে হলে আকাশের সেই সীমা ছুঁতে হবে যেই সীমা কথা আপনি কখনো ভাবতেও পারেননি। তাহলে নিজের মধ্যে এই তিনটি গুণ সংযোজিত করুন।
২ নম্বর সাহস, সমস্যার সমাধান করা। এটা আপনার দ্বারা তাই করাতে পারে যা আপনি
সত্যি করতে চান।
৩ নম্বর অভিজ্ঞতা, অভিজ্ঞতা আপনাকে বলে দিবে কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়।
শ্রী কৃষ্ণের বাণী
শেষ কথা
বন্ধুগণ, থাকি। শেষ কথা ই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল যদা যদা হি ধর্মস্য
গীতার শ্লোক এবং অহংকার নিয়ে গীতার বাণী আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে
সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোন কিছু বুঝতে না পারলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর
কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
শেষ কথা আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে
দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে যদা যদা হি ধর্মস্য গীতার শ্লোক -
অহংকার নিয়ে গীতার বাণী পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন
নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url