আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় উপকারিতা ক্ষতিকর দিক

ভূমিকা

আমলকি আমাদের দেহের জন্য ভীষণ উপকারী ফল। সময় এবং নিয়ম অনুসরণ করে আমলকি খেলে দেহের নানান রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি মিলে। আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় উপকারিতা ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য এবং মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় উপকারিতা ক্ষতিকর দিক

প্রিয় পাঠক আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেলে নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেল রয়েছে, আমলকি খাওয়ার সঠিক সময়, কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা, আমলকির ক্ষতিকর দিক, শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা, প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত ইত্যাদি।

আমলকি খাওয়ার সঠিক সময়

আমরা অনেকেই জানি আমলকি ফলের উপকারিতা অনেক। যদি আপনি খাওয়ার সঠিক সময় এবং নিয়ম অনুসরণ করে খান তাহলে আমলকি ফলের উপকারিতা গুলো আপনার কাজে আসবে। আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় এবং কেমন করে খাবেন বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো।

খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে রয়েছে, ভিটামিন সি ৪৬৩ মিলিগ্রাম, শর্করা ১৬.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৮ গ্রাম, আশ ৩.৪ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৭০ কিলো ক্যালরি, ক্যালসিয়াম ২২ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১ ০.০৩ মিলিগ্রাম।

আমলকি ফল সাধারণত সকালে খালি পেটে খাওয়া উচিত। আমলকি ফলের রস দিয়ে দিন শুরু করলে পুষ্টির শোষণ বাড়িয়ে তুলে তার পাশাপাশি হজম ক্ষমতা বাড়ায় এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। আমলকি ফলে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও পুষ্টিকর উপাদান থাকায়, সকালে খালি পেটে আমলকি ফলের রস খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ করতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।

আমলকি ফল চিবিয়ে খেতে পারেন অথবা আমলকির ফল ব্লেন্ডার মেশিন এর সাহায্যে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। আমলকি ফল সব সময় খাওয়া যায়। তবে যখনই খান না কেন আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় সকালে। সকালে খেলে বেশি উপকারিতা পাবেন।

ব্লেন্ডার মেশিনে ১০ ট দশ টির মত আমলকি টির মোত আমলকি, একটু আদা, কয়েকটি গোলমরিচ এবং এক গ্লাস পানি একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন এরপরে ছেকে নিয়ে স্বাস্থ্য উপকারী আমলকির জুস পান করুন। চাইলে এর সাথে এক চিমটি সামুদ্রিক লবণ ও ২ থেকে ৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি হল আমাদের দেহের জন্য সবচাইতে উপকারী একটি ঔষধি ফল। আমলকি প্রতিদিন খেতে পারেন, এই ফল এর তেমন কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বরং আছে দারুন সব উপকারিতা। প্রতিদিন ১ থেকে ২ টি করে কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।

  • আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • আমলকি চুলের খুশকির সমস্যার দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।
  • আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পায়েলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এ ছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রোধ করতে দারুন উপকারি।
  • এক গ্লাস দুধ বা পানির সঙ্গে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেলে এসিডিটির সমস্যা থাকলে তা খুব সহজেই নিস্তার পাবেন।
  • আধার চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে।
  • প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।
  • আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি অথবা পানি পড়ার সমস্যা রোধ করে।
  • আমলকি চোখ ভালো রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • আমলকির রস প্রতিদিন খেলে বিশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁতের গোড়া শক্ত থাকে।
  • আমলকির টক ও তেতো মুখের রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। রুচি বৃদ্ধি ও খিদে বাড়ানোর জন্য আমলকির গুঁড়ো সঙ্গে সামান্য মধু ও মাখন মিশিয়ে খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
  • কফ, বমি, অনিদ্রা, ব্যথা বেদনাই আমলকির অনেক উপকার।
  • ব্রস্কাইটিস ও অ্যাজমার জন্য আমলকির জুস উপকারী।
  • আমলকি শরীর ঠান্ডা রাখে, শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে, পেশি মজবুত করে।
  • আমলকি হৃদযন্ত্র, ফুসফুসকে শক্তিশালী করে ও মস্তিষ্কের শক্তি বর্ধক করে। আমলকির আচার বা মুরব্বা মস্তিষ্ক ও হৃদ যন্ত্রের দুর্বলতা দূর করে।
  • লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে দাঁত ও নখ ভালো রাখে।
  • এর এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি রেডিক্যাল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • সর্দি কাশি, পেটের পিরা ও রক্তশূন্যতা দূর করণে বেশ ভালো কাজ করে থাকে আমলকি।
  • ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে পাশাপাশি কোলেস্টরেল লেভেল ও কম রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
প্রিয় পাঠক সুতরাং আপনারা কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করি জেনে গিয়েছেন। তাই প্রতিদিন ১ থেকে ২ টি আমলকি অথবা আমলকির আচার খেতে একদমই ভুলবেন না।

আমলকির ক্ষতিকর দিক

আমলকি অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল। উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ও প্রোটিন রয়েছে এতে তাই মানবদেহের জন্য ভীষণ উপকারী। তবে উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে আমলকির ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কাদের জন্য আমলকি খাওয়া চলবেনা বা আমলকির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে হলে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
  • আমলকি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। জুস বা অন্য কোন ভাবে খাওয়ার থেকে আমলকি চিবিয়ে খাওয়া ভালো। যে সময়ে আমলকি বেশি উৎপাদন হয় সেই সময়ে গোটা ফল খাওয়ার সুযোগ নিতে হয়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ থেকে ২ টি আমলকি খাওয়া যায় এর অধিক খাওয়া যাবেনা। কারণ এতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • যাদের সার্জারী হয়েছে তারা আমলকি এড়িয়ে চলুন। কিছু ক্ষেত্রে আমলকি এড়িয়ে চলা ভালো। যদি কোনো সার্জারি হয়ে থাকে বা রক্ত নিয়ন্ত্রণের ঔষধ খান তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আমলকি খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
  • অন্তঃসত্ত্বা বা বাচ্চাদের স্তন্য দানকারী মায়েদের আমলকি এড়িয়ে চলা ভালো।
  • হার্টের জন্য ক্ষতিকারক আমলকি। এটি একটি শক্তিশালী কার্টি ওভারস্কেলের উদ্দীপক। তবে আমলা আমাদের শরীরের তেমন কোনো কঠোর প্রভাব ফেলে না, বিশেষজ্ঞদের মতে কার্টিয়া সমস্যাযুক্ত কোন সমস্যা থাকলে এই ফলটি ব্যবহার করার আগে তাদের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • আমলকি খেলে এলার্জি হতে পারে। খুব কম লোকেরই আমলার সাহায্যে এলার্জি হয়।
  • আমলকি অত্যন্ত বেশি খাওয়ার ফলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা হয় যেমন, পাকস্থলীতে কৃমি, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডা লাগতে পারে।

প্রিয় পাঠক কাঁচা অবস্থায় আমলকি প্রচন্ড কস্টা এবং তিতা হয়। দিয়ে কাঁচা আমলকি মুখে দিয়ে চিবানোর সময় মুখ জোরে আসে পাশাপাশি মুখের ভেতর খসখসে ভাব অনুভব হয়। বন্ধুগণ এই ছিল আমলকির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা আমলকি পাতলা পাতলা করে কেটে তার সঙ্গে বিট লবন মিশিয়ে রোদে শুকাতে দিবেন। মোটামুটি ৫ থেকে ৭ দিন রোদে শুকাতে দিতে হবে। শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম, শুকনো আমলকি ব্লেন্ডার মেশিন এর সাহায্যে ব্লেন্ড করতে হবে। অথবা যে কোন প্রক্রিয়ায় গুঁড়ো করে নিবেন।

রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে ৩ থেকে ৫ চা চামচ আমলকি গুঁড়ো সারারাত ভিজে রেখে সকালে খালি পেটে ছেঁকে খেয়ে নিতে পারেন। এর সঙ্গে যোগ করতে পারেন মধু, আদা, কালাই জিরা, গোলমরিচ ইত্যাদি এতে আরো উপকার বেশি পাবেন। বন্ধুগণ আশা করি শুকনো আমলকি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমলকি অনেকেই খেতে পারেন না কারণ কাঁচা আমলকি অনেক কস্টা এবং তিতো হয়ে থাকে তাই অনেকেই আমলকি রোদে শুকিয়ে গুড়ো পাউডার বানিয়ে খান। শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখা পড়তে থাকুন।

শুকনো আমলকি খাওয়ার প্রধান উপকারিতা হলো কাঁচা অবস্থায় এটি অনেক কস্টা এবং তিতো লাগে তাই অনেকেই আমলকি রোদে শুকিয়ে খাই।


আমলকি মৌসুমী ফল, মৌসুম ব্যতীত অন্যান্য সময়ে খুব কম পাওয়া যায়। এর উপকারিতা ও গুনাগুন অনেক, তাই অনেকেই আমলকি রোদে শুকিয়ে বাসায় সংরক্ষণ করে রাখে সারা বছর ধরে খাওয়া যায়। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ করতে শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অপরিশিম।

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত? আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। একটি প্রাপ্ত মানুষ ফিট থাকতে প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার হয় যা ২ টি আমলকি থেকে খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব।

বন্ধুগণ আমলকি কমলার চেয়ে ২০ গুণ এবং আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ টি আমলকি খেতে পারেন। ৩ টির বেশি আমলকি খাওয়ার ফলে তার শরীরে নানান রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বন্ধুগণ প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত আশা করি জেনে গিয়েছেন।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় উপকারিতা ক্ষতিকর দিক এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।


অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে আমলকি খাওয়ার সঠিক সময় উপকারিতা ক্ষতিকর দিক এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url