সুপারি খাওয়ার গুণাগুন উপকারিতা অপকারিতা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার নিয়ম
ভূমিকা
আমাদের দেশে প্রায় অধিকাংশ জায়গায় সুপারি চাষ হয়। সুপারি চিবিয়ে খায় না এমন
মানুষ খুব কম পাওয়া যায়। সুপারি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল।
সুপারি খাওয়ার গুণাগুন উপকারিতা অপকারিতা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার নিয়ম নিয়ে হাজির
হয়েছি। তাই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য এবং মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকোন।
প্রিয় পাঠক আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরো একটি নতুন ব্লগ
আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত সুপারি
খাওয়ার গুণাগুন, সুপারি খাওয়া ক্ষতি, সুপারি খেলে মাথা ঘুরায় কেন, সুপারি দিয়ে
কি তৈরি হয়, সুপারি খাওয়া কি হারাম, গর্ভাবস্থায় সুপারি খেলে কি হয় ইত্যাদি
সম্পর্কে জানতে পারবে।
সুপারি খাওয়ার গুণাগুন
সুপারি গাছ প্রায় ২০ থেকে ২৫ মিটার লম্বা হয়। কাঁচা ফলের রং সবুজ এবং পাকলে
হলুদ হয়। তবে সুপারির কিছু ঔষধি গুনাগুন আছে তা কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা তাই
সুপারি খাওয়ার গুণাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো।
কাঁচা সুপারিতে অন্য ০.১ থেকে ০.৫ অ্যালকাইলয়েড থাকে। যার কারণে মাথা ঘুরে।
প্রতি ১০০ গ্রাম সুপারি তে আছে ২৮৯ ক্যালোরি শক্তি যোগানোর ক্ষমতা।
সুপারি খাওয়ার গুণাগুন, পেটে কৃমির উপদ্রব দেখা দিলে ২ টি সুপারি গুড়ো করে ৩ কাপ
সমপরিমাণে পানিতে ফুটিয়ে নিবেন, ১ কাপ হওয়া মাত্র নামিয়ে নিবেন। ছেকে সকাল
বিকেল দুইবার খেলে এই রোগের উপশম মিলবে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এটি খাওয়ানো যাবে
না।
পেশি শক্তিশালী করতে সহায়তা করে সুপারিতে অনেকগুলো ক্ষারক রয়েছে যার
মধ্যে এন্টি মাস্কেল প্রভাব রয়েছে, যা পেশি গুলোকে নরম এবং শক্তিশালী করে তুলে।
পচা ঘা এর জন্য উপকারী কাকা সুপারি ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে খোঁচা সহ রোদে
শুকিয়ে মিহির চূর্ণ গুড়ো পচা ঘায়ে লাগানোর ফলে ঘা শুকিয়ে যায় এবং দুর্গন্ধ
দূর হয়।
বমি ভাব দূর করে চলন্ত গাড়ি যেমন বাস, মাইক্রো, হাইস ইত্যাদি উঠলে অনেকের
বমি পায়। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে গাড়িতে ওঠার আগে সুপারি গুড়ো মুখে দিয়ে চিবাতে
থাকবেন এতে বমি ভাব দূর করে। সুপারি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
মুখের ঘা প্রতিরোধ করে সুপারি মুখে দিয়ে চিবানোর ফলে আপনার মুখে একটি
লালা সৃষ্টি হয় এটি আপনার মুখের ঘা প্রতিরোধ করে।
কাভিটি দূর করে বিশেষজ্ঞদের মতে সুপারিতে অ্যানথেলেনান্টিক এফেক্ট বা
পরজীবী ধ্বংসকারী রয়েছে যা কাভিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
বন্ধুগণ যদি অতিরিক্ত সুপারি খান তাহলে দাঁত ও মারির ইনফেকশন দূর করে। সীমিত
মাত্র সুপারি খেলে দাঁত ও মারির জন্য অনেক উপকারী। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে
সুপারি মুখে দিয়ে চিবানোর ফলে মুখের ঘা এর পাশাপাশি ঠোঁটের লাল হয়ে চামড়া উঠে
যাওয়া ভালো হয়ে যায়।
সুপারি খাওয়ার ফলে আলসার ও প্রতিরোধ করে পাশাপাশি রক্তাল্পতার ঝুঁকি কমাতে
সুপারির ব্যবহার হতে পারে। তবে অধিক মাত্রায় সুপারি খাওয়ার ফলে অন্যান্য
সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। বন্ধুগণ এই ছিল সুপারি খাওয়ার গুণাগুন সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য
সুপারি খাওয়া ক্ষতি
সুপারি, উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন থাকার পরেও এতে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
সুপারি খাওয়া ক্ষতি বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে
পড়তে থাকুন।
সুপারিতে থাকে অ্যাডরেনালিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মানব দেহের জন্য
ভীষণ ক্ষতিকর। এছাড়াও সুপারিতে রয়েছে, অ্যারেকোলিন, অ্যারেকাইডিন, গাভাকাইনসহ
অনেক ধরনের ক্ষার জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকায় সুপারি খাওয়ার হলে আমাদের
রক্তনালী সংকুচিত হয়।
এছাড়াও অতিরিক্ত সুপারি খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব,
কিডনির সমস্যা, বুক ধরফর, লিভার ড্যামেজ, হাঁপানি, হৃদরোগ, বিপিএইচ, ডায়াবেটিস,
ইনফার্টিলিটি, ফুসফুস, দাঁত ও মারীর ক্ষয়, গর্ভবতী মায়ের জন্য ইত্যাদি এইগুলো
ক্ষতি ছাড়াও দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য সুপারি ক্ষতিকারক।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সুপারি খাওয়া একেবারেই নিষেধ, ছোট বাচ্চারা সুপারি খেলে
ওজন ও উচ্চতা কমে। সুপারিতে থাকে মেটাবলিক সিন্ড্রোম যা ক্যান্সার এর মত রোগ ডেকে
আনে।
সুপারি খেলে অনেকের মাথা ঘুরে। এতে রয়েছে ০.১ থেকে ০.৫ অ্যালকালয়েড যার কারণে
মাথা ঘুরে।
২০০৯ সালে ৩০ জন বিজ্ঞানী ভারতীয় উপমহাদেশে এক এলাকায় ১ লাখ লোকের ওপর পরীক্ষা
করেছেন তার মধ্যে শতকরা ৩০ জনের খাদ্যনালীতে ক্যান্সার হয়েছিল বলে তারা প্রমাণ
দিয়েছেন।। তাই পরিশেষে বলাই যায় সুপারি খাওয়া ক্ষতি অনেক।
সুপারি খেলে মাথা ঘুরায় কেন
সুপারি খেলে মাথা ঘুরায় কেন জানেন কি? সুপারি খেলে মাথা ঘুরায় কেন এই প্রশ্নের
উত্তর অনেকেই খোঁজাখুঁজি করেন, জানতে হলে নিজের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে
থাকুন। সুপারিতে রয়েছে অ্যাডরেনালিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তার
পাশাপাশি ০.১ থেকে ০.৫ অ্যালকালয়েড যার কারণে মাথা ঘুরে।
অ্যালকালয়েড এমন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা কোনভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে
অল্পতেই শরীর গরম হয়, গা গুলাতে শুরু করে, বমি বমি ভাব হয়, মাথা গা ঘুরে
ইত্যাদি। একসঙ্গে ৩ থেকে ৪ টি সুপারি খাওয়ার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
বন্ধুগণ সুপারি খেলে মাথা ঘুরায় কেন আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
সুপারি দিয়ে কি তৈরি হয়
সুপারি অর্থকারী ফসলের মধ্যে অন্যতম একটি ফসল, তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটিকে
চাষ করা হয়। সুপারি দিয়ে কি তৈরি হয় জানেন কি? জানতে হলে নিচের লেখাগুলো
মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকো। বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানান রকমের খাবার খাওয়ার
পর পান সুপারি না খেলে খাওয়াটা সম্পূর্ণ হয় না।
এই প্রচলন গ্রাম বাংলায় এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। সাধারণত সুপারি পানের স্বাধ
বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পানের সঙ্গে খাওয়া হয়। সুপারি সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয়
পানের সঙ্গে। তবে পান ছাড়া অনেকেই এমনিতেও সুপারি খেয়ে থাকে। সুপারি খেলে বমি
হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
আপনার যদি চলন্ত গাড়িতে উঠলে বমি পেয়ে থাকে তাহলে সুপারিম মুখে দিয়ে চিবাতে
থাকুন এতে বমি হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও সুপারি নানান রকমের অনুষ্ঠানে
ব্যবহার করা হয়। যেমন, হিন্দুদের পুজো, বিয়ের অনুষ্ঠানে, অন্নপ্রাশনে, চাদ্ধের
অনুষ্ঠানে ক্ষেত্রে সুপারির ব্যবহার জনপ্রিয়। সুপারি দিয়ে কি তৈরি হয় আশা করি
আপনারা জেনে গিয়ে।
সুপারি খাওয়া কি হারাম
সুপরি এটি একটি গাছের ফল। তবে ধর্মের দিক দিয়ে, সুপারি খাওয়া কি হারাম? এই
প্রসঙ্গে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকোন। সুপারিকে বিশ্বের
সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। সুপারি খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নানান রকমের বিপাকীয়
রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যেই সকল খাবার নেশা দ্রব্যের মধ্যে পড়ে, অর্থাৎ যে সকল
খাবার খেলে নেশা হয় সেই সকল খাবার খাওয়া হারাম। তবে ইসলামিক ভিত্তিতে কোথাও
উল্লেখ করা নেই সুপারি খাওয়া কি হারাম না ভালো। যেহেতু সুপারি আমাদের শরীরের
জন্য ক্ষতিকর সেই প্রেক্ষিতে সুপারি না খাওয়াই ভালো।
সুপারি কাঁচা অবস্থায় খেলে মাথা ঘুরে সাথে ক্যান্সার এর মত রোগ আক্রমণ করার
সম্ভাবনা বেশি। শুকনা সুপারি পাওয়া যায়, শুকনা সুপারি বাজারজাতকরণের জন্য
ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে কাঁচা সুপারি পেরে জাগে বাসায়। সুপরি জাগ দেওয়ার কারণে
এটি নেশা দ্রব্যের মধ্যে জড়িত হয়। বন্ধুগণ সুপারি খাওয়া কি হারাম আশা করি
আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
গর্ভাবস্থায় সুপারি খেলে কি হয়
গর্ভবতী মায়ের পেটের সন্তান থাকা অবস্থায় নানান রকমের খাবার খাওয়ার ইচ্ছে হয়।
গর্ভাবস্থায় অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত সেই প্রেক্ষিতে
গর্ভাবস্থায় সুপারি খেলে কি হয় জানেন কি? জানতে হলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ
সহকারে পড়তে থাকুন।
সুপারি খাওয়ার ফলে ক্যান্সার এর মত মরণব্যাধি রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা
বেশি। গর্ভাবস্থায় সুপারি খাওয়া একদম নিষেধ। গর্ভাবস্থায় এমনিতেই নানান রকমের
রোগের আক্রমণ করে। এই সময় নেশাদ্রব্য জাতীয় জিনিস একদমই খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় সুপারি খাওয়ার ফলে মা ও শিশুর যেই সকল রোগ দেখা দিবে তা নিচে
উল্লেখ করা হলো।
গর্ভবতী কুফরি খেলে সবচেয়ে বড় যেই ঝুঁকি থাকে তা হল ক্যান্সার। শিশুর ওজন ও
উচ্চতা কম হতে পারে। এছাড়াও গর্ভের বাচ্চার শারীরিক ত্রুটি যেমন, ঠোঁট কাটা,
তালু কাটা, বাচ্চা অনেক দুর্বল হতে পারে। প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় সুপারি খেলে
কি হয় আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন।
শেষ কথা
বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল সুপারি খাওয়ার গুণাগুন উপকারিতা
অপকারিতা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার নিয়ম এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক
তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের
সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে
অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো
লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে
অবশ্যই শেয়ার করবেন।
শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে
দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে সুপারি খাওয়ার গুণাগুন উপকারিতা
অপকারিতা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার নিয়ম এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট
ফলো
করুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url