তিসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও অপকারিতা পুষ্টীগুণ
ভূমিকা
ছোট্ট ছোট্ট কালো দানা বিশিষ্ট বহু রোগের মহা ঔষধ এই তিসি বীজ। তিসি বীজ এই বিষ
যদি আপনি সঠিক নিয়মে খান তাহলে এর বহু উপকারিতা পাবেন। তিসি খাওয়ার নিয়ম
উপকারিতা ও অপকারিতা পুষ্টীগুণ নিয়ে হাজির হয়েছি। জানতে হলে সীমা আইটি
ওয়েবসাইটের সঙ্গে থাকুন।
প্রিয় পাঠক আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ
আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে, তিসির
উপকারিতা ও অপকারিতা, তিসি খাওয়ার অপকারিতা, তিসি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা,
তিসি গাছের ছবি, তিসি আর তিল কি এক ইত্যাদি।
তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা
স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে এই আর্টিকেল। প্রিয় পাঠক আপনারা কি তিসির
উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন কি? তিসির উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে হলে নিচের
লেখাগুলো ধৈর্য এবং মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
১০ গ্রাম তিসির মধ্যে রয়েছে, ৫৫ ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট ৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৯
গ্রাম, ফাইবার ৪.৩ গ্রাম, এবং ফ্যাট ২.৮ গ্রাম। তিসিতে রয়েছে অনেক পরিমাণে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কপার, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, আইরন,
ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।
এই সকল উপাদান আমাদের মানব শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এ সকল ভিটামিন ও মিনারেল
তিসির মধ্যে রয়েছে, তাই তিসি খাওয়ার ফলে যে সকল উপকারিতা মিলে চলুন জেনে নেয়া
যাক।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরকে সবসময়ই সুস্থ ও সবল রাখার জন্য ওমেগা ৩
ফ্যাটি অ্যাসিড দারুণ ভূমিকা পালন করে। তিসির মধ্যে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি
অ্যাসিড। বিশেষ করে এনজাইটিভ প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটাতে
এবং হিপ যন্ত্র সুস্থ রাখতে ও বেল পাওয়ার বৃদ্ধি করতে তিসির ভূমিকা অপরিসীম।
গবেষণায় প্রমাণিত নিয়মিত কয়েক চামচ তিসি বিষ খাওয়া শুরু করলে ওমেগা ৩
ফ্যাটি অ্যাসিড এর মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় ফলে অটো ইমিউনিটি রোগে আক্রান্ত
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। শুধু তাই নয় উপাদানটি ক্যান্সার এর মত
মরণবাদী রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমায়।
ফাইবার ১০ গ্রাম পিসি ২০ এর মধ্যে রয়েছে ৪.৩ গ্রাম ফাইবার। তিসি বিশ
পেতে যাওয়া মাত্র কোলেস্টরের এর মাত্রা কমায় এবং পেটের নানান রকমের রোগ এর
সাথে প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি তিসি বীজ রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার
সম্ভাবনা কমায়। লিভার এর কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
কোলেস্টরেল গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত তিসি বিজ খাওয়ার ফলে শরীরে
খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা প্রায় ২০% কমে যায়। অন্যদিকে উপকারী কোলেস্টরেল
বা HDL এর মাত্রা ৫০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে হৃদযন্ত্রের কোন ধরনের
ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি নিয়মিত কয়েক চামচ করে তিসির বীজ খাওয়ার
ফলে শরীরের ভিতরে এমন কিছু উপাদান বৃদ্ধি পায় যার ফলে ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে বলিরেখা কমাতে ও সময় লাগে না। বিভিন্ন
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, নিয়মিত তিসি বীজ সেবন করলে স্কাল্পে রক্ত প্রদাহ বেড়ে
যায় এর ফলে মাত্রা অতিরিক্তভাবে চুল পড়া সমস্যা কমে যায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে একটি সুস্থ মানুষের প্রতিদিনের খাবার তালিকায়
৩০ গ্রাম তিসির বীজ খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, এতে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায়
নেমে আসতে সময় লাগে না। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা নিয়মিত তিসি বীজ খেতে
পারেন।
খিদে কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে আপনার যদি অতিরিক্ত ওজন থেকে থাকে
তাহলে আপনি নিয়মিত তিসি বীজ খেতে পারেন। তিসি বীজ খাওয়ার ফলে খিদে কম লাগে এবং
ওজন কমতে শুরু করে।
সুগার নিয়ন্ত্রণ করে গবেষণায় দেখা গিয়েছে টাইপ টু ডায়াবেটিসের
রোগীরা যদি ১০ থেকে ২০ গ্রাম তিসি বীজ এক মাস ধরে নিয়মিত খাবারের সঙ্গে মিশে
খেতে থাকে তাহলে তাদের সুগার ১০ থেকে ২০% কমে যায়।
উচ্চমানের আমিষ পাওয়া যায় তিসি বীজ হল উদ্ভিদ আমিষের একটি ভালো উৎস।
তিসি বীজে প্রচুর পরিমাণে আর্জেনিন নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং গ্লুটানিক
অ্যাসিড রয়েছে। তাই এই তিসি বীজ থেকে উচ্চমানের আমিষ পাওয়া যায়। এছাড়াও
তিসি বিজ খাওয়ার ফলে টিউমার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ করে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যেই সকল ব্যক্তি নিয়মিত তিসি
বীজ সেবন করে তাদের ছোটখাটো রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সেই সাথে
সংক্রমণের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তিসি বীজ মানব শরীরের জন্য ভীষণ
উপকারী ও রোগের মহা ঔষধ।
প্রিয় পাঠক এই ছিলতিসির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখন আপনারা
নিচের অংশে তিসির অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবেন।
তিসি খাওয়ার অপকারিতা
শরীর সুস্থ রাখতে তিসি বীজ এর ভূমিকা অপরিসীম। তবে অধিক মাত্রায় খাওয়ার ফলে
উপকারিতার পাশাপাশি তিসি খাওয়ার অপকারিতা ও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তিসি
খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
অধিক পরিমাণে তিসি বীজ খাওয়ার ফলে আপনার পেট খারাপ অথবা ডায়রিয়া হতে পারে।
যারা প্রথম প্রথম এই বীজ খায় বিশেষ করে তাদের অনেকেরই এই সমস্যাটা হয়ে থাকে।
দেখা গিয়েছে অনেকের শরীরে এলার্জি, চুলকানি, র্যাশ, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া এরকম
সম্মুখীন হয়েছে।
অতিরিক্ত তিসি বীজ খাওয়ার ফলে বারে বারে বমি, গা গুলান, মাথা ধরা, মাথাব্যথা,
চোখে ঝাপসা দেখা, তলপেটে কামড়, পেট চাপ ধরে থাকা, এমনকি ব্লাড প্রেসার নিচে নেমে
যেতে পারে। এই বীজে ফাইবার এর পরিমাণ বেশি তাই এগুলোর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিসি বীজ সন্তান ধারণ করার বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যিনারা সন্তান নিতে যাচ্ছেন
তাদের অন্তত ছয় মাস আগে থেকে এই বীজ খাওয়া পরিহার করতে হবে। এই বীজ হরমোন এর
ওপর খারাপ প্রভাব ফালে, ফলে সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। পাশাপাশি তিসি বীজ
গর্ভবতী মায়েদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
গর্ভবতীর মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে ফেলে এবং পেটে থাকা সন্তান এর ওজন কম হয় এবং
সন্তান বেশি বড় হতে পারে না। তাই তিসি বীজ আপনারা পরিমাণ মতো খাবেন। একজন
ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম অর্থাৎ তিন চা চামচ এর বেশি খাওয়া উচিত নয়।
বন্ধুগণ এই ছিল তিসি খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
তিসি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সঠিকভাবে ও সঠিক নিয়মে তিসি বীজ সেবন করলে তবেই মিলবে এর উপকারিতা। তাই তিসি
খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য এবং মনোযোগ
সহকারে পড়তে থাকুন। তিসী বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা সকলেরই প্রয়োজন।
হবে শব্দের মতে একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনে ৩০ গ্রাম, সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম এর কম তিসি
বীজ খেতে পারেন। এই বীজ কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। বন্ধুগণ বাজারে তিসি বীজ এর
গুরু পাউডার কিনতে পাওয়া যায়। তবে সেই গুলো বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না
এবং উপকারিতা ও কম মিলে।
আপনি যদি বাড়িতে নিজের প্রক্রিয়া করেন তাহলে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারবেন
পাশাপাশি ভালো উপকারিতা মিলবে। তিসি বীজ কেমন করে খাবেন? ভালোভাবে পরিষ্কার করে
নিয়ে মিডিয়াম তাপে ভেজে নিতে হবে।
হালকা রং পরিবর্তন হলে ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে অথবা আপনার যে কোন
প্রক্রিয়ায় মিহি গুঁড়ো করে নিবেন। মিহি গুঁড়ো প্রতিদিন সকালে তিন চা চামচ করে
পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। অথবা তিসি বীজ তেল বানিয়ে খেতে এবং শরীরে
ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে মিলবে এর উপকারিতা।
বন্ধুগণ এই ছিল তিসি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি
আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। জনসচেতনতার ক্ষেত্রে পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে
শেয়ার করবেন।
তিসি গাছের ছবি
তিসি গাছের ছবি
তিসি আর তিল কি এক
বন্ধুগণ তিসি আর তিল কি এক এটা নিয়ে অনেকের মনে কৌতুহল রয়েছে। তিসি আর তিল কি
এক এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চলুন। তিসি আর তিল আলাদা আলাদা বীজ ও আলাদা আলাদা
উপকারী। দেখতে কিছুটা এক তাই অনেকেই মনে করে তিসি আর তিল এর বীজ এক। দুই বীজকে
সুপারফুড খাদ্য বলা হয়।
এই দুই বিজি মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী বীজ। অনেকেই এই দুই বীজ নিয়ে
গোলমাল পাকিয়ে দেয় কারণ, এই দুই বীজ এর চেহারা কিছুটা এক। বন্ধুগণ আশা করি তিসি
আর তিল কি এক এই সম্পর্কে আপনারা অবগত হয়েছেন।
শেষ কথা
বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল তিসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও
অপকারিতা পুষ্টীগুণ এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে
পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের
সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই
আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার
এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে
দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে তিসি খাওয়ার নিয়ম উপকারিতা ও
অপকারিতা পুষ্টীগুণ এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন
এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url