খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ক্ষতিকর দিক চেনার উপায়

ভূমিকা

শীতের মৌসুমে গ্রামবাংলায় মাঠে-ঘাটে দেখা যাই সরিষা ফুল ও গাছ। হলুদ ও সাদা বর্ণের ফুল, ফুল থেকে ফল, ফল থেকে সরিষা তেল। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি খাঁটি সরিষার তেলের ব্যবহার হয়ে আসছে নানান রোগের মহা ঔষধ হিসেবে। খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক। খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ক্ষতিকর দিক চেনার উপায় জেনে নেওয়া যাক।
খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ক্ষতিকর দিক চেনার উপায়

প্রিয় পাঠক আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা, সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক, খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায়, সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি সম্পর্ক নিয়ে।

খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা

বাঙ্গালীদের মধ্যে সরিষার তেল আবেগ ও ঐতিহ্যর সাথে মিশে আছে। প্রচিনযুগ থেকে আমাদের দেশের গ্রাম বাংলার লোকজন তেল বলতে শুধু সরিষার তেলকেই বুঝতেন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এই তেল আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। খাঁটি সরিষার তেলের ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম-বেশি অনেকেই জানি।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাই একটি যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক। সরিষার তেল Mono Unsaturated Fat ও Inflammatory উৎপাদনে সমৃদ্ধ। এই তেলে রয়েছে ওমেগা৩, ওমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, অক্সিডেন্ট, এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ। সরিষার তেলে খুব অল্প পরিমাণে স্যাচুরেটেড ও চর্বি রয়েছে।

এছাড়াও ১০০ গ্রাম সরিষার তেলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ১২ গ্রাম, পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ২১ গ্রাম, মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫৯ গ্রাম রয়েছে। তাই খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক, খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা নিচে উল্লেখ করা হলো
  • নিয়মিত খাঁটি সরিষার তেল খেলে শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পায় ও হজম প্রক্রিয়া তরান্বিত করে, ফলে যেকোন খাবার খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়।
  • সরিষার তেল ত্বক ও শরীরে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয় ও শরীর গরম থাকে। খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস দূর হয়। ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও প্রানবন্ত। নিয়মিত খাঁটি সরিষার তেল শরীরে ব্যবহার করলে কখনোই ত্বক ও শরীর কালো হয় না।
  • খাঁটি সরিষার তেলে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় হাঁটুর ব্যথা, শরীরের অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা, বাতের ব্যথা, কোমরের ব্যথা, নানান রকমের ব্যথা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
  • খাঁটি সরিষার তেলে Glucosinolate নামক উপাদান থাকায় মানব দেহের শরীরে মলাশায়ের ক্যান্সার ও অন্তের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  • খাঁটি সরিষার তেল এবং রসুন হালকা তাপে গরম করে নিয়ে বুকে ও পিঠে মালিশ করলে যক্ষা, কফ, সর্দি কাশি ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সরিষার তেল কে শ্বাসতন্ত্রের পরিষ্কার এর মহা ঔষধ বলা হয়।
  • নিয়মিত খাঁটি সরিষার তেল খেলে সরন শক্তি বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে যদি নাভিতে সরিষার তেল ব্যবহার করেন তাহলে অনেক উপকার পাবেন।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে খাঁটি সরিষার তেল বুকে ও পেটে মালিশ করলে মাসিকের ব্যথা ও বদ হজম জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
  • সরিষার তেলের মধ্যে রয়েছে পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা রক্তের কোলেস্টরেলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে ৮০ শতাংশ হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
  • খাঁটি সরিষার তেলের গন্ধে এক ধরনের ঝাঁঝালো ভাব আছে যা মশা, মাছি ও পোকামাকড় তাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • খাঁটি সরিষার তেল ২ চা চামুচ, হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ, ১ থেকে ২ চা চামচ লবণ ভালোভাবে মিক্সচার করে নিয়ে নিয়মিত হালকা করে দুই বেলা দাঁত ব্রাশ করবেন। তাহলে জিঞ্জাভাইটিস ও পেরিওডন্টাইটিস রোগ থেকে মুক্তি মিলে।
বন্ধুগণ এতক্ষণ আপনারা খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানলেন। যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করবেন।

সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

খাঁটি সরিষার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও খেলে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়। সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে সরিষার তেলে রয়েছে, ৪২ থেকে ৪৭ শতাংশ ইউরিক অ্যাসিড, ওমেগা৯ ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের শরীরের জন্য বিষাক্ত।


অতিরিক্ত সরিষার তেল ব্যবহার ও খাওয়ার ফলে পেটে এসিডিটি হতে পারে, পাশাপাশি ডায়রিয়া ও পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও খাঁটি সরিষার তেলে রয়েছে, ইরেটিক অ্যাসিড যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর। সরিষার তেল অতিরিক্ত ঝাল মসলা দিয়ে ভাজলে মায়োকর্ডিয়াল লিপিডোসিস হতে পারে। যা শরীরের ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে হার্টের ক্ষতি করে।

সরিষার তেলে রয়েছে ইউরিক অ্যাসিড, তাই অতিরিক্ত সরিষার তেল খাওয়ার ফলে ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রতিদিন অতিরিক্তমাত্রায় সরিষার তেল ব্যবহার করলে এপিডার্মিসের ক্ষতি করে যা ত্বকের জলীয় অংশের পরিমাণ কমিয়ে দেয় ফলে ত্বক ফোসকা পড়ে। দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত সরিষার তেল খেলে চর্বি জমার আশঙ্কা রয়েছে।

বন্ধুগণ এই ছিল সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। জনসচেতনতার ক্ষেত্রে পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করবেন।

খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায়

বাঙালিরা রান্নার কাজে বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করে থাকেন তার মধ্যে সরিষার তেল অন্যতম। অন্যান্য তেলের থেকে সরিষার তেল এর উপকারিতা বেশি তাই বেশিরভাগ মানুষই এই তেল ব্যবহার করে থাকেন। আমাদের উপমহাদেশে ৩০০০ খৃষ্টপুর্বাব্দ আগের থেকে চিকিৎসার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার হয়ে থাকে।

অন্যান্য তেলের থেকে সরিষার তেলের দাম ও কার্যকারিতা বেশি বলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় নানান রকমের পদার্থ মিশিয়ে বিক্রি করছেন। অন্যান্য খাদ্য পুণ্যের পাশাপাশি সরিষার তেলেও এখন ভেজালে সয়লাব। তাই খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায় নিয়ে চলে এসেছি। খাঁটি সরিষার তেল এবং নকল তেল এর পার্থক্য জানতে নিচের লেখাগুলো পড়তে থাকুন।


ভেজাল সরিষার তেল খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে নানান রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। যেমন, পেট খারাপ, বমি, পেট ফলা, সারা শরীরে র‍্যাশ, দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, হার্টের সমস্যা শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

বাহির থেকে সরিষার তেল আসল না নকল সনাক্ত করা খুব কঠিন একটা কাজ তাই ভেজাল সরিষার তেল সনাক্ত করার কিছু পদ্ধতি জেনে নিন।
  • সরিষার তেল দুই থেকে তিন ঘন্টা ফ্রিজে রেখে দিলে দেখবেন তা জমে সাদা হয়ে গেছে তাহলে বুঝবেন তাইলে ভেজাল মিশানো আছে। খাঁটি সরিষার তেল কখনোই জমে না, সব সময় তরল অবস্থায় থাকে।
  • খাঁটি সরিষার তেলে তীব্র ঝাঁঝালো একটা গন্ধ অনুভব হয় এবং এর ঝাঁঝে আপনার চোখে পানি চলে আসবে। ভেজাল পেলে কোন গন্ধ খুঁজে পাবেন না এবং কোন ঝাঁঝ বুঝতে পারবেন না।
  • ভেজাল সরিষার তেল কাপুরের লাগলে কাপড়ে কালো দাগ পরে কিন্তু খাঁটি সরিষার তেল কাপড়ে কোন দাগ পড়ে না।
  • ২ থেকে ৪ ফোঁটা সরিষার তেল হাতের তালুতে নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষার পর যদি দেখেন তেলে রং ছেড়ে দিয়েছে বা অন্য কোন বন্ধু অনুভব করছেন অথবা চিটচিটে ভাব অনুভব হচ্ছে তাহলে বুঝবেন তেলে ভেজাল মিশ্রিত আছে।
  • সরিষার তেলের রং গাঢ় ও অন্যান্য তেলের তুলনায় গাঢ় হয়। লক্ষ্য করবেন যেইগুলো সরিষার তেল কিছুটা হলুদ বর্ণের হয় সেগুলো তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকার সম্ভাবনা বেশি।
  • একটি গ্লাসে অল্প পরিমাণে সরিষার তেল নিবেন তার মধ্যে নাইট্রিক অ্যাসিড মিশিয়ে নাড়াচাড়া করলে যদি দ্রব্যটির লাল বর্ণ ধারণ করে তাহলে বুঝবেন তেলে ভেজাল আছে।
প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনারা খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত পড়লেন। আশা করি এখন থেকে আসল সরিষার তেল খুব সহজেই চিনতে পারবেন।

সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক এখন আমরা আলোচনা করব সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক সরিষার তেল কেমন করে এবং কতটুকু খাওয়া উচিত, সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম কি কি।

প্রাচীন যুগ থেকে সরিষার তেল রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। রান্নার পাশাপাশি খাঁটি সরিষার তেল ঔষধি গুণাগুনেও ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন তরকারিতে খাবার সাধ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরিষার তেলের ব্যবহার করা হয়। সরিষার তেল সরিষা বীজ থেকে তৈরি, তাই এই তেলের ঘ্রাণ ও খাবারের স্বাদ হয় অতুলনীয়।


খাঁটি সরিষার তেল কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় আবার রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় যেমন, হালকা নাস্তায় যেমন মুড়ি মাখায়, বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধ মাখায়, সালাত মাখায়, বিভিন্ন রকমের ভর্তা মাখায় ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও খাঁটি সরিষার তেল গোসল করার আগে শরীরে ভালোভাবে মালিশ করে গোসল করলে শরীরে আদ্রতা ফিরে আসে।

সরিষার তেল রান্না করেও খাওয়া যায়। আপনার দৈনন্দিন জীবনে আপনি কি পরিমান তেল খেয়ে অভ্যস্ত তার উপর ভিত্তি করে আপনি বিভিন্ন তৈরির তরকারিতে তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও মাছ ভাজার ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহার করলে মাছের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। সরিষার তেল খাওয়ার নিয়ম, আপনি কাঁচা ও খেতে পারেন আবার রান্না করেও খেতে পারে।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ক্ষতিকর দিক চেনার উপায় এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে খাঁটি সরিষার তেলের উপকারিতা ক্ষতিকর দিক চেনার উপায় এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url