ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকা

অসাধারণ গুণে ভরপুর সুপরিচিত ধনে বা ধনিয়া এটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Coriandrum sativuml. ধনেপাতা কে আমরা রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সব থেকে বেশি ব্যবহার করে থাকি। এই পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি তৃণ জাতীয় খাবার। ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছি।
ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মূলত ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে। 

এই আর্টিকেলে রয়েছে, ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, ধনে পাতার উপকারিতা, ধনে পাতার অপকারিতা, ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।

ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, অধিকাংশ মানুষ ধনেপাতার উপকারিতা না জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে আসছে। চলুন ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা তার পাশাপাশি ধনে পাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

এতে রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল, ৬ ধরনের অ্যাসিড (অ্যাসকরবিক এসিড যা ভিটামিন সি নামে বেশি পরিচিত), ভিটামিন মিনারেল এবং অন্যান্য উপকারী পদার্থ। এতে রয়েছে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ফসফরাস, ক্লোরিন এবং প্রোটিন। তাই এই পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোন কারণ নেই।

ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, ধনেপাতা রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি রূপচর্চায় ও দারুন কাজে দেয়। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে ধনেপাতার দারুণ কার্যকর। যাদের ঠোঁটে কালো দাগ আছে তারা রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ধনেপাতার রসের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ঠোঁটে লাগান।


এভাবে নিয়মিত বেশ কিছুদিন ব্যবহার করলে ঠোঁটের কালো দাগ দূর হবে। প্রিয় পাঠক, ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আরো তথ্য জানতে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

ধনে পাতার উপকারিতা

  • ধনে পাতা খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমে যায়, ভালো কোলেস্টরেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
  • হজমে উপকারী, যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, পেট পরিষ্কার হয়ে যায় ধনেপাতা খেলে।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ধনে পাতার উপকারিতা অপরিসীম। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।
  • ধনেপাতায় থাকে অ্যান্টি সেপটিক মুখে আলছার নিরামইয়েও উপকারী, চোখের জন্য ভালো।
  • ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ভালো হওয়ার জন্য ধনেপাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আইরন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী।
  • ধনেপাতার ফ্যাট স্যলুবল ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন এ ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
  • এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথা সহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে।
  • স্মৃতিশক্তির প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে ধনে পাতা।
  • ধনেপাতার ভিটামিন কে অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় বেশি কার্যকরী।
  • ধনেপাতায় উপস্থিত সিনিওল এসেনশিয়াল অয়েল এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধো অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যামান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।
  • ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা,ত্বকের শুস্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • ক্যালসিয়াম আয়ন এবং কলিনার্জিক বা অ্যাসেটিকোলিন উপাদান মিলে আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • আন্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা এলার্জি এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
  • খাবারের মাধ্যমে সৃষ্টি সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা। ধনেপাতায় উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ ছাড়িয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়োটিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকর।
  • এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসান, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন সি এবং আয়রন গুটি বসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।
  • বিভিন্ন ভেষজ পদার্থের সাথে মিশিয়ে যৌনশক্তি বৃদ্ধি করতে ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
  • কারো মুখের যদি দুর্গন্ধ হয় এবং অরুচি লাগে তাহলে ধনে ভাজা করে বোতলে ভরে রাখুন। মাঝেমধ্যে চিবিয়ে খান এতে মুখের দুর্গন্ধ থাকবে না।
  • কারো মাথাব্যথা হলে ধনেপাতা ও গাছের রস কপালে লাগান। মাথা ব্যথা কমে যাবে।
  • ধনেপাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি মজবুত হয় এবং দাঁতের গোড়া হতে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

ধনে পাতার অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, এখন আমরা আলোচনা করব ধনে পাতার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। চলুন শুরু করা যাক। যারা ধনেপাতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করে খেতে পছন্দ করেন অথবা ধনেপাতা যাদের অনেকটাই প্রিয় খাবার তারা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। ধনেপাতা খাওয়ার ফলে কিছু রোগের সম্মুখীন হতে পারেন।

লিভারের সমস্যা

ধনেপাতায় এক ধরনের উদ্ভিদ ও তেল থাকে যা শরীরের অঙ্গ-পতঙ্গ কে আক্রান্ত করে, বিশেষ করে লিভার ড্যামেজ করে। এছাড়াও এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তাই যাদের লিভার দুর্বল তারা অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

লো ব্লাড প্রেসার

ধনেপাতা খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার খুব দ্রুত নিচে নেমে আনে। যাদের শরীর খুব রোগা পাতলা, যাদের শরীরে ব্লাড প্রেসার সব সময় কম থাকে তারা যদি ধনেপাতা খান তাহলে হঠাৎ করে মারাত্মক রকমের অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ঠিক তেমনি ভাবে যাদের হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে তারা ধনেপাতা খেয়ে ব্লাড প্রেসার কমিয়ে রাখতে পারবেন।

শ্বাসকষ্ট

যাদের জন্মগত শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ধনেপাতা খাওয়ার ফলে মারাত্মক রকম ক্ষতি হতে পারে। কারণ, ধনেপাতা হঠাৎ করে শ্বাস-প্রশ্বাস ও শ্বাসকষ্ট কে বাড়িয়ে দেয় এছাড়াও ফুসফুসে এজমার সমস্যা নতুন করে সৃষ্টি করে। শ্বাসকষ্টের রোগীরা ধনেপাতা খাওয়ার ফলে ছোট ছোট নিঃশেষ নিতে সমস্যা বোধ করে।

এলার্জি

অনেকের কোল্ড এলার্জি রয়েছে। সব সময় হাচ্চি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এই ধরনের সমস্যা থাকে আবার কারো কারো রয়েছে ত্বকের এলার্জি। ত্বকে র‍্যাস, এলার্জি, চুলকানি এই ধরনের সমস্যা অনেকেই ভুগে থাকেন তাদের জন্য ধনেপাতা খুব ক্ষতিকর।

ধনেপাতায় যেই প্রোটিন রয়েছে সেটি শরীরে আইজি নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে, অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয় ফলে এলার্জির প্রবণতা দেখা দেয়। এই এলার্জি এতটাই তীব্র এর থেকে ফুসফুস এর প্রদাহর কারণে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকো।

রূপচর্চায়

অনেক সময় ধনেপাতা ত্বকে সংবেধনশীলতা তৈরি করে থাকে। এতে বেশ কিছু ঔষধি এসিডিটি উপাদান রয়েছে যা ত্বকে সূর্য রশ্মি থেকে বাচায়। কিন্তু, অতিরিক্ত সংবেদনশীল করে ফালে এর ফলে আপনার ত্বকের সূর্য রোশনির প্রভাব পরেনা। এই কারণে ত্বক ভিটামিন এ থেকে বঞ্চিত হয়।


গর্ভবস্থায় ধনেপাতা

যারা গর্ভবতী মা অথবা সন্তান নিতে চাচ্ছেন তারা ধনেপাতা খাওয়া বন্ধ করে দিন। নারীদের গল্পকালীন সময়ে যদি কেউ নিয়মিত ধনেপাতা খায় তাহলে ব্রণের ও বাচ্চার শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ধনেপাতায় থাকা বেশ কিছু উপাদান নারীদের প্রজনন গ্রন্থে কার্যক্ষমতা কে নষ্ট করে দেয়। কাজে আপনার সন্তান বা অনাগত সন্তান এর জন্য ধনেপাতা খুবই ক্ষতিকর।

ত্বক

ধনেপাতায় বিভিন্ন এসিডিটি উপাদান রয়েছে যা ত্বক কে সংবিধানশীল করে ফলে মুখে প্রধান সৃষ্টি হয়। ঠোঁট, মারি, গলায় প্রচন্ড ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, হারামুখ লাল হয়ে যেতে পারে শুধুমাত্র কখনো কখনো ধনেপাতা কাঁচা খাবার কারণে। যাদের মুখে আগের থেকে ঘা হয়ে রয়েছে তারা ধনেপাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

পেট খারাপ

অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার কারণে পেট খারাপ হতে পারে। এর থেকে আপনার ডায়রিয়া, দীর্ঘদিন ধরে পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধনেপাতায় উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল লিভারকে প্রটেক্টেড করে পাশাপাশি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে লিভার ড্যামেজ হয়। গবেষকদের তথ্য অনুসারে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার পরে বুকের ব্যথা হতে পারে।

ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, এখন আমরা আলোচনা করব ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা ধনে পাতা খাই তরকারির স্বাদ বৃদ্ধির জন্য কিন্তু রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কেমন করে ধনেপাতা খেতে হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো।

একজন সুস্থ মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৫ টি ধনে গাছ ও পাতা খেতে পারবে। ধনে পাতা বেশিরভাগ সকলেই বিভিন্ন তড়িৎ তরকারিতে খাবারের সুগন্ধ ও স্বাদ বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করেন অনেকেই। এছাড়াও ধনেপাতা ভাতের সঙ্গে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়, অনেকেই ধনেপাতার চপ বানিয়ে খাই। ধনেপাতা সকালে খালি পেটে খেলে বেশি উপকারিতা মিলে।


তবে বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুসারে ধনেপাতা খেয়ে রোগ নিরাময় করতে হলে ধনেপাতাকে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে এর রস খেয়ে ঠান্ডা জল পান করতে হবে। ধনেপাতার জুস বানিয়ে খেতে পারেন। অথবা ধনেপাতা পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই পানি পান করতে পারেন। প্রিয় পাঠক এই ছিল ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে ধনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ৩০ টি ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url