তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি

ভূমিকা

তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম Ocimum Sanctum. সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৮ প্রজাতির তুলসী পাওয়া যায়। ভারত বর্ষ ও বাংলাদেশ তিন ধরনের তুলসী দেখা মিলে রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী, বন তুলসী। তুলসী পাতায় রয়েছে অজস্র উপকারিতা। সকল উপকারিতা পেতে হলে খেতে হবে সঠিক নিয়মে নয়তো মিলবে অপকারিতা। তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি
তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি

প্রিয় পাঠক, আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মূলত তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি নিয়ে। এই আর্টিকেলে রয়েছে, তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, তুলসী পাতার উপকারিতা, তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক, তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম, তুলসী পাতার উপকারিতা ত্বকের জন্য ইত্যাদি।

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

যখন আমরা ছোট ছিলাম তখন মা আমাদের তুলসী পাতার রস খাওয়াতেন। তুলসী পাতায় উপস্থিত পুষ্টিগুণ ১ চামচ তুলসীর রসে রয়েছে ভিটামিন এ ৩%, ভিটামিন কে ১৩%, ক্যালসিয়াম ৫%, আইরন ০.৫%, ম্যাঙ্গানিজ ১.৫%, মোট ক্যালোরি ০.৬৫ পার্সেন্ট, এছাড়াও তুলসী পাতায় রয়েছে Tarpene,Carvacrol,Rosmarinic অ্যাসিড ইত্যাদি।


এতসব পুষ্টিগুণ থাকায় তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। প্রিয় পাঠক, তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে হাজির হয়েছি। তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে ধৈর্য সহকারে পড়তে থাকুন।

তুলসী পাতার উপকারিতা


জ্বর সর্দি কাশি

যদি সাধারণ জ্বর সর্দি-কাশির মতো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা খেতে পারেন তাহলে দেখবেন জ্বর সর্দি কাশির মত সমস্যা অল্প দিনের মধ্যে কমে আসছে। তুলসী পাতা বুকে জমে থাকা কফ বাইরে বের করে দেয়।

গলার ব্যথা

শীতকাল পড়ার সাথে সাথে অনেকের গলার ব্যথা ও গলায় ইনফেকশন এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। গলার ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা ও কিছু পানি নিয়ে পাঁচ থেকে সাত মিনিট ফুটিয়ে নিন, তারপর সেই জলটি নিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার গার্গেল করুন।

কিডনির স্টোন

তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। অ্যাসিটিক অ্যাসিড আপনার কিডনির স্টোন কে ব্রেক ডাউন করতে সাহায্য করে ফলে কিছুদিনের মধ্যে ইউরিন এর মাধ্যমে সেই কিডনি স্টোন বাহিরে বের হয়ে আসে।

হার্ট

তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরে ন্যায়টিক অক্সাইড এর প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের শরীরে ধমনি শিরা উপশিরা প্রসারিত করে তার ফলে আমাদের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয় এবং হার্ট সুস্থ থাকে।

কোলেস্টরেল

নিয়মিত তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টরেল বের করে দেয় এবং ভালো কোলেস্টরেল তৈরি করে। ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ

ছোট শিশুদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। আপনি যদি নিয়মিত ছোট শিশুদের তুলসী পাতার রস খাওয়াতে থাকেন তাহলে সময় ক্যালিন ছোট বড় অসংখ্য রোগ প্রতিরোধ হয়।

মানসিক দুশ্চিন্তা

তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের Cortisol Hormone লেভেল কে ডাউন করে হলে আপনি মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন।


চোখ সুস্থ রাখে

বিশেষ করে ছোট শিশুদের চোখে দেখা যায় চোখ লাল হয়ে যায়, চোখে অঞ্জলি এবং যেকোনো প্রকারের চোখের ইনফেকশন দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম। তুলসী পাতায় উপস্থিত ভিটামিন এ, আন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টি আপনার চোখ সুস্থ রাখে।

মুখের ঘা প্রতিরোধ

মুখের ঘা প্রতিরোধ করতে ১০ থেকে ১২ টি তুলসী পাতা মুখে দিয়ে চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত বেশ কিছুদিন দিনে দুই থেকে তিন বার খাওয়ার ফলে মুখের ঘা প্রতিরোধ হবে তার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে।

ইনফেকশন

আমাদের শরীরে অনেক সময় বিভিন্ন পোকা কামড় দেয় অথবা হুল ফোটায় তখন সেই জায়গায় ইনফেকশন সৃষ্টি হয় ফলে প্রচন্ড ব্যথা, যন্ত্রণা ও জ্বালা হয়। আক্রান্ত জায়গায় তুলসী পাতা বেটে নরম কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখুন, তাহলে ইনফেকশন জ্বালা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

চুলকানি

অনেকের শরীরে যদি চুলকানি, পচা ঘা ইত্যাদি দেখা দেয় তাহলে সেই ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রাখুন। গোসল করার সময় বেশ কিছু তুলসী পাতা পানিতে ফুটিয়ে নিন এবং সেই পানি দিয়ে গোসল করুন এতে আপনার চুলকানি পচা ঘা থেকে মুক্তি পাবেন।

রূপচর্চায়

তুলসী পাতা বেটে মুখে ব্যবহার করলে মুখের কালো দাগ দূর হবে পাশাপাশি ত্বকের স্মৃতির সমস্যা দূর হবে। রূপচর্চায় তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম।

তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক

প্রিয় পাঠক এতক্ষণ আপনারা তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানলেন। তুলসী পাতার উপকারিতার পাশাপাশি তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাই চলুন কথা না বাড়িয়ে তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।


তুলসী পাতা এটি একটি ঔষধি গাছ তাই এটি খাওয়া মোটামুটি সবার জন্য নিরাপদ। তবে গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এবং শিশুদের স্তন পান করা এরকম মায়েদের তুলসী পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। গর্ভবতী মায়েরা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় তুলসী পাতা খেয়ে থাকেন তাহলে (ইউটেরাস এবং বেলভিক) এরিয়ার মধ্যে ব্লাডের ফ্লো বেড়ে যায়।

উচ্চমাত্রায় ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়ার কারণে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে সকল মা শিশুদের স্তন পান করাচ্ছেন তারা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় তুলসী পাতা খেয়ে ফেলেন তাহলে, থাইরয়েড লেভেল ডাউন হয়ে যায় ফলে স্তনের মধ্যে দুধের ফ্লো কমে যায়। এই কারণে গর্ভবতী মায়েদের ও সদ্য জাতক শিশুদের মায়েদের তুলসী পাতা না খাওয়াই ভালো।

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

তুলসী পাতা কোন নিয়মে খাবার ফলে বেশি উপকারিতা পাবেন জানেন কি? তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে হলে নিচের লেখাগুলো পড়তে থাকুন। খুব দ্রুত তুলসী পাতার উপকারিতা পেতে হলে শুধু তুলসী পাতার রস পান করুন। সকালে খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার ফলে শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।

সকালে খালি পেটে ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা মুখে দিয়ে চিবাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার মুখের দুর্গন্ধ দূর হওয়ার পাশাপাশি মুখের ভিতরের ব্যাকটেরিয়া মারা যাবে। বন্ধুগণ আশা করি তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা আপনারা পেয়ে গিয়েছেন।

তুলসী পাতার উপকারিতা ত্বকের জন্য

প্রিয় পাঠক তুলসী পাতার নানান রকম সব উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলেন, আপনি কি জানেন ত্বকের জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতার উপকারিতা ত্বকের জন্য কিভাবে ব্যবহার করবেন এবং ত্বকে ব্যবহারের ফলে কি ঘটে জানতে হলে মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।


তুলসী পাতা ত্বকের ব্যবহার করলে রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করে, ত্বকের যেকোনো রকমের নতুন ও পুরাতন কালো দাগ দূর করে, ত্বকের ব্রণ ও অ্যাজমা প্রতিরোধ করে, শীতের সময় রুক্ষ ত্বক থেকে মুক্তি পেতে তুলসী পাতা ত্বকে ব্যবহার করুন, তুলসী পাতা বয়সের ছাপ দূর করতে বেশ উপকারী।

ত্বকের জন্য তুলসী পাতার উপকারিতা পেতে হলে কেমন করে ব্যবহার করবেন? সবচাইতে ভালো উপকারিতা পেতে হলে শুধু তুলসী পাতা বেটে নিন অথবা ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে ব্লেন্ড করে নিন তারপর তুলোর সাহায্যে অথবা যে কোন মাধ্যমে ত্বকে ভালোভাবে মিশিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধরে রেখে দিন তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

অথবা তুলসী পাতার পেস্ট এবং বেসন একসঙ্গে মিক্সার করে ত্বকে ব্যবহার করতে পারে। এই মিশ্রণটি ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিবেন। প্রিয় পাঠক এই মিশ্রণ গুলো সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন এতে ভালো ফলাফল পাবেন। বন্ধুগণ এই ছিল তুলসী পাতার উপকারিতা ত্বকের জন্য বিস্তারিত তথ্য।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল তুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে ততুলসী পাতার উপকারিতা - তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক ২০ টি এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url