২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম

ভূমিকা

লবঙ্গ খুব পরিচিত একটি মসলা। বেশিরভাগ মানুষ রান্নায় সুগন্ধর ও স্বাদ বৃদ্ধির জন্য মসলা হিসেবে খাই। যদি আপনি লবঙ্গের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানেন তাহলে এটি মসলা হিসেবে নয়, বরং শরীরের রোগ দূর করার জন্য ওষুধ হিসেবে খাবেন। প্রিয় পাঠক, ২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছি।
২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মূলত ২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে। এই আর্টিকেলে রয়েছে, লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা, লবঙ্গের উপকারিতা, লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক, লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম, প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত ইত্যাদি।

লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা

এই সামান্য মসলা আপনার জন্য অসামান্য সুফল বইয়ে আনবে। শরীরে কোন ধরনের রোগ হবে না যদি আপনি প্রতিদিন সঠিক ভাবে লবঙ্গ খেতে পারেন। যদি লবঙ্গ খেয়ে রোগ প্রতিরোধ করতে চান, তাহলে এটি আপনাকে বিশেষ নিয়মে খেতে হবে। লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা এই মন্তব্যে জেনে নিন লবঙ্গ তে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। নাইজেরিসিন

লবঙ্গ তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, প্রোটিন, লিপিড, ক্যালোরি, খাদ্য আঁশ, কার্বোহাইড্রেট, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফোলেট, ভিটামিন বি ৬, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন কে।


লবঙ্গ ছোট্ট একটি মসলা তে এত লম্বা পুষ্টিগুণ ভিটামিন থাকায় লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা অপরিসীম। লবঙ্গ মানব শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। কোন কোন রোগ প্রতিরোধ করে জানতে হলে নিচে লবঙ্গের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন।

লবঙ্গের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক লবঙ্গের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

হজম প্রতিরোধ

আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে বদ হজম বা আপনার পেটে হজমের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিয়মিত দুইটি করে লবঙ্গ খাওয়া শুরু করুন। এর মধ্যে উপস্থিত ইউজেনিস অ্যাসিড এবং ক্যাটাবোলিক অ্যাসিড আপনার ডাইজেস্টিক সিস্টেমে বিভিন্নভাবে এনজাইম সিক্রেশনে বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে আপনি যেই সমস্ত খাবার খান সেই খাবারগুলো খুব সহজেই হজম হয়।

লিভার এর রোগ প্রতিরোধ

লবঙ্গের মধ্যে উপস্থিত প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের লিভার এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের অর্গান গুলিকে ফ্রি রেডিকেল এর হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। লবঙ্গের মধ্যেও থাকা হেপাটক প্রটেক্টিভ লিভার কে প্রোটেক্টেড করে থাকে ফলে লিভারের রোগ প্রতিরোধ হয়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ

নিয়মিত লবঙ্গ খেলে ইনসুলিন রেজিস্টেশন এর মত সমস্যা, সেই সমস্যাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে নিয়ে আসে। তাই আপনি যদি টাইপ টু ডায়াবেটিস এর রোগী হয়ে থাকেন তাহলে লবঙ্গ আপনার জন্য ভীষণ উপকারী। যে কোন খাবার খাওয়ার ফলে যদি হঠাৎ করে গ্লুকোজ এর মাত্রা বৃদ্ধি পাই সেই ক্ষেত্রে লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়ার ফলে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম।

বোন ডেনসিটি

লবঙ্গের মধ্যে উপস্থিত Eugenol, Flavones, Isoflavones এইগুলো উপাদান বিদ্যামান থাকায় হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি ঠিকঠাক থাকে এবং আপনার হাড়ের মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থ, মেঙ্গানিজ, ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড যা আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম এর পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে, মাংসপেশি এবং হাড়ের বোন ডেনসিটি ঠিকঠাক থাকে।

ইনফেকশন

লবঙ্গের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রপার্টি শরীরের যেকোনো ইনফেকশন দূর করতে বেশ উপকারী। এছাড়াও আপনি যদি নিয়মিত লবঙ্গ খেতে পারেন তাহলে ইনফেকশনের কারণে যেই সমস্ত রোগ জেলার সৃষ্টি হয় আপনার শরীরে সেই সমস্ত রোগ থেকে আপনি অনেক দূরে থাকতে পারবেন।

দাঁতের ব্যথা

আপনার যদি দাঁতের ব্যথা হয়ে থাকে বা দাঁতে পোকার আক্রমণ করে থাকে তাহলে লবঙ্গের তেল অথবা দাঁতের ক্ষতস্থানে গোটা লবঙ্গ লাগিয়ে রাখবেন। লবঙ্গের তেল অথবা গোটা লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা, দাঁতের পোকা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে বেশ উপকারী।

যৌন শক্তি বৃদ্ধি

পুরুষ অথবা নারী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রতিদিন যদি দুইটি করে লবঙ্গ খায় তাহলে কাম উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। লবঙ্গ শরীরে টেস্ট কোস্ট এর হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ফলে সেই ব্যক্তির যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, লবঙ্গের মধ্যে উপস্থিত Eugenol কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ক্লোরোট্রল ক্যান্সার, ওভারিয়াল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।


মাথার যন্ত্রণা

আপনার যদি মাথার যন্ত্রণা হয়ে থাকে তাহলে একটি নরম সুতির কাপড়ে কয়েকটি লবঙ্গ বেঁধে নিয়ে আপনি ঘ্রাণ নিতে থাকুন। আপনি দেখবেন কিছু সময় পর ধীরে ধীরে আপনার মাথার যন্ত্রণা কমে এসেছে। লবঙ্গের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কুলিং এবং পেইন রিলিভিং এজেন্ট যেগুলি আপনার মাথার যন্ত্রণা নিমিষেই কম করতে সক্ষম।

রোগ প্রতিরোধ

শরীরের বিভিন্ন ছোটখাটো রোগ যেমন সর্দি, কাশি, মাথাব্যথা, জ্বর ইত্যাদি প্রতিরোধ করে থাকে লবঙ্গ। লবঙ্গ তে আছে নাইজেরিসিন নামক উপাদান। যা শরীরের বিভিন্ন ছোটখাটো রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।

চুলের যত্ন

চুলের যত্নে লবঙ্গের তেলের ভূমিকা অপরিসীম। লবঙ্গের তেল চুলে লাগানোর ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুল ঘন ও কালো হয়, চুলের খুশকি দূর হয় ইত্যাদি।

রূপচর্চায়

রূপচর্চায় লবঙ্গের ভূমিকা অপরিসীম। লবঙ্গের তেল ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ, কালো দাগ, এজমা, মেচেতার দাগ, ত্বকের সংক্রমণ ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।

মাইগ্রেন

আপনি কি রাতের তারা? আপনার কি ঘড়ির কাঁটা ভোরের দিকে অগ্রসর হয় তবুও চোখে ঘুম আসে না? এইরকম সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে লবঙ্গ মহা উপকারী ঔষধ। নিয়মিত দুইটি করে লবঙ্গ খেলে মাইগ্রেন এর সমস্যা প্রতিরোধ হয়।

মূত্রনালীর সংক্রমণ

আপনার যদি অতিরিক্ত শরীর চড়া হয়ে থাকে অর্থাৎ তীব্র রোদ গরমে থেকে শরীর অনেক পরিমাণে উত্তাবিত হওয়ার ফলে মূত্রনালীর সংক্রমণ দেখা দেয় ফলে প্রস্রাব করতে গিয়ে প্রস্রাবের দ্বারে জ্বালাপোড়া হয়। এই ক্ষেত্রে আপনার শরীরের জন্য লবঙ্গের উপকারিতা। শরীর ঠান্ডা ও শীতল রাখতে লবঙ্গের ভূমিকা অপরিসীম।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

আপনার শরীরে যদি অতিরিক্ত চর্বি থেকে থাকে তাহলে লবঙ্গের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিদিন দুইটি করে লবঙ্গ খাওয়ার ফলে শরীরে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ঘামের মাধ্যমে বের করে ফলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক

লবঙ্গের একাধিক পরিমাণে উপকারিতা রয়েছে। প্রিয় পাঠক আমরা সকলেই জানি যে কোন জিনিসের উপকারিতার পাশাপাশি তার ক্ষতিকর দিক ও থাকে। তাই লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক নিয়ে হাজির হয়েছি। লবঙ্গের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

লিভারের সমস্যা

অতিরিক্ত মাত্রায় লবঙ্গ খাওয়ার ফলে লিভার এর নানান রকম সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। ফলে আপনার বদহজম, অম্লতা ও গ্যাস এর সৃষ্টি হতে পারে।


এলার্জি

যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত মাত্রায় লবঙ্গ খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। ফলে তাদের শরীরে চুলকানি, রাস, লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

রক্তখনন

লবঙ্গ তে থাকা ইউজেনল রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যদি আপনার শরীরে কোথাও কেটে যায় তাহলে অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তখনন হতে পারে। যাদের শরীরে রক্তের শর্করা অতিরিক্ত মাত্রায় রয়েছে তাদের অতিরিক্ত মাত্রায় লবঙ্গ খাওয়া উচিত নয়, ফলে তাদের হাইপার গ্লাইসিমা হতে পারে।

ঝাল

লবঙ্গ একটু ঝাঁজালো ঝাল হয়ে থাকে। তাই আপনি একসঙ্গে অনেকগুলো লবঙ্গ চিবিয়ে খেতে পারবেন না। একসঙ্গে অনেকগুলো লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবালে মুখে ফোসকা পড়তে পারে।

লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক এখন আমরা আলোচনা করব লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আমরা অনেকেই লবঙ্গকে রান্নাঘরে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। অনেকে লবঙ্গ চা এর সাথে ব্যবহার করে থাকেন, আবার অনেকেই লবঙ্গ দুধ এর সাথে ফুটিয়ে খেয়ে থাকেন, গবেষকদের মতে লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম, মুখের মধ্যে লবঙ্গের দানা নিয়ে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে।


এই ক্ষেত্রে আমাদের মুখের মধ্যে কোন প্রকার দুর্গন্ধ থেকে থাকলে ধীরে ধীরে কেটে যায়। এছাড়াও দাঁত ও মাড়ির মধ্যে কোন প্রকার ইনফেকশন থেকে থাকলে সেটি খুব সহজেই দূর হয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে দুইটি লবঙ্গ একসঙ্গে চিবিয়ে কুসুম গরম জল খেয়ে নিতে পারেন এতে অনেক উপকার মিলবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে গা ব্যথা দূর করবে।

প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত

প্রিয় পাঠক আপনি কি জানেন, প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত? জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। গবেষকদের মধ্যে, আপনি প্রতিদিন ১ গ্রাম থেকে ২ গ্রাম লবঙ্গ খেতে পারেন। আপনি যদি প্রতিদিন ১ গ্রাম থেকে ২ গ্রাম লবঙ্গ খান তাহলে একটানা ১৫ দিন খেয়ে আবার ১৫ দিনের একটি গ্যাপ দিতে হবে।


গবেষকরা এটাও বলেছেন, প্রতিদিন ১ থেকে ২ গ্রাম করে লবঙ্গ না খেয়ে প্রতিদিন ২ টি করে খাওয়া উচিত। আপনি যদি প্রতিদিন দুইটি করে লবঙ্গ খান তাহলে মাঝখানে কোন গ্যাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন কয়টি লবঙ্গ খাওয়া উচিত, প্রতিদিন দুইটি করে লবঙ্গ খাওয়া উচিত। আশা করি আপনারা জেনে গিয়েছেন।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল ২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে ২০ টি লবঙ্গের উপকারিতা ও অপকারিতা খাওয়ার নিয়ম এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url