১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকে গোলমরিচ খাদ্যে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গোলমরিচকে বলা হয় মসলার রাজা কারণ এটির মতো গুনাগুন আর কোন মসলাই নেই। যেমন খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে তেমনি মানব দেহের জন্য এটি ভীষণ উপকারী। তাই ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে হাজির হয়েছি।
১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরো একটি নতুন ব্লগ আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মূলত ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে। এই আর্টিকেলের রয়েছে, গোলমরিচ এর উপকারিতা, গোলমরিচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম, সাদা গোলমরিচ ইত্যাদি।

গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রিয় পাঠক, গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা এই মন্তব্যে আমি আপনাদের জানাবো আসলে গোলমরিচ খাওয়ার ফলে আমরা যে সকল উপকারিতা পাই তা কি জন্য এবং কোথাই থেকে পাই সেই সম্পর্কে আগে জেনে নেওয়া যাক। গোলমরিচে রয়েছে, ঝাঁঝালো মসলাটির মূল উপাদান পাইপারিন। এছাড়াও এতে রয়েছে,

ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, আরো রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও খনিজ উপাদান। বাঙালির রান্নায় মসলাটির ব্যবহার খাবারে এনে দেয় নতুন স্বাদ, আবার সাধের খাবারেও ভিন্ন স্বাদ এনে দেয় গোলমরিচ।


এছাড়াও গোলমরিচ মানব শরীরের রোগ নিরাময়ের জন্য ভীষণ উপকারী, স্বল্প পরিমাণে রয়েছে অপকারিতা। গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

গোলমরিচ এর উপকারিতা

গোলমরিচ হজমে সাহায্য করে

গোলমরিচেপি পারিনি নামক এক ধরনের উপাদান থাকে আর সেই জন্য এটি ঝাঁঝালো স্বাধের হয়। গোল মরিচ খাওয়ার ফলে খাবার হজমে সাহায্য করে। আর ঠিকভাবে খাবার হজম হওয়া মানেই কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদহজম, গ্যাস এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে।

ক্যালোরি কমায়

আজকাল অনেকেই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। গোটা গোলমরিচের খোসা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে ও শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে। কোন রকম ব্যায়াম করা ছাড়াই গোলমরিচ খাওয়ার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি ঘামের মাধ্যমে বের করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

গোল মরিচের রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এইগুলো উপাদান আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রিরেডিকেল এবং ক্যান্সার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। গোল মরিচ মলদার এর কোলন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়

গবেষণায় প্রমাণিত গোলমরিচ খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও রক্তের প্রদাহ ঠিক রাখে। যেকোনো সংক্রমণ, পোকামাকড় কামড়ানো, ব্যাকটেরিয়া অথবা ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়া হাত থেকে রক্ষা করে। গোলমরিচের ঝাল কাঠি ও ভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। গোল মরিচে বিদ্যমান উপাদান শরীরের খারাপ কোলেস্টরেল কমায়।

রূপচর্চায়

গোল মরিচে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ফ্রি রেডিক্যাল কমায় তার পাশাপাশি মুখে ছাপ পড়ার জন্য দায়ী, তেমনি শরীরকে ভেতর থেকে সচল রাখে। বাহিরের ক্ষতি কর সূর্য রশ্মির হাত থেকে ত্বকে রক্ষা করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গোল মরিচ গুঁড়ো করে ত্বকে লাগানোর ফলে ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় পাশাপাশি পিকমেন্টেশন ও একমি দূর হয়।

চুলের যত্ন

চুলের যত্নে গোলমরিচ এর উপকারিতা অপরিসীম। যাদের চুলে খুশকি রয়েছে তাদের জন্য গোলমরিচ উত্তম। এক চামচ গোল মরিচ গুঁড়ো, এক কাপ টক দই, এক চামচ মধু ভালোভাবে মিক্সচার করে নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মালিশ করুন ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হবে পাশাপাশি চুল ঘন ও বৃদ্ধি পাবে এবং খুশকি দূর হবে।

ঠোঁটের যত্ন

ঠোঁটে ঘা, ঠোঁটের মাংস লাল, দাঁতে ঘা, দাঁতে ক্যাভিটি বা ব্যথা এই সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে গোল মরিচ গুঁড়ো এবং লবণ একত্রে কুলকুচি করলে মুখের ঘা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও মুখের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে গোলমরিচ এর উপকারিতা অনেক।

ব্রেন বৃদ্ধি

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত গোলমরিচ খাওয়ার ফলে ব্রেন বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উপকারিতায় কাজে আসে। একটা সময় বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের ব্রেনের নিউরনগুলো মারা যেতে সাহায্য করে, গোলমরিচ এই নিউরণ গুলোকে জীবিত রাখতে সাহায্য করে।


ডায়াবেটিস

রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে গোলমরিচ। গোলমরিচ খাওয়ার ফলে শরীরের সেই এনজাইম কে ভেঙে ফেলে এটা শর্করা খাবার কে গ্লুকোজ এ পরিণত করে। এছাড়াও শরীরের গ্লুকোজ কে ধীরে ধীরে শোষণ করতে সাহায্য করে ফলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয়।

সর্দি কাশি

এক চামচ গোল মরিচ গুঁড়ো ও মধু খাওয়ার ফলে বুকে জমা সর্দি কাশি, যেকোনো ভাইরাস ইনফেকশন, জ্বর, গলা ব্যথা, মুখের অরুচি ভাব দূর করে। গোলমরিচ শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক এর মত কাজ করে।

ধূমপান প্রতিরোধ

ধূমপান খাওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইলে গোল মরিচ তেলের গন্ধ শোষণ করতে থাকুন অথবা গোলমরিচ খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনার ধীরে ধীরে ধূমপান খাওয়া থেকে আপনি বিরত থাকছেন।

গোলমরিচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রিয় পাঠক গোলমরিচ এর অনেক উপকারিতা থাকার পরেও গোলমরিচের স্বল্প পরিমাণে রয়েছে অপকারিতা। তাই গোলমরিচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে হাজির হয়েছি। গোলমরিচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে

স্বাভাবিকভাবে খাবারের সাথে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে গোলমরিচ নিরাপদ, কিন্তু বেশি গোলমরিচ খেলে মারাত্মক আকার নিতে পারে ফলে এব্রেশন করা লাগতে পারে। যে সমস্ত মায়েরা বাচ্চাদের দুধ খাওয়ান তাদের গোলমরিচ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

শিশুদের ক্ষেত্রে

খাবারের সাথে স্বাভাবিক মাত্রায় কিছুটা গোলমরিচ শিশুদের খাওয়ানোর ফলে কোনরকম ক্ষতি হয় না। তবে এমনও দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত মাত্রায় শিশুদের গোলমরিচ খাওয়ানোর ফলে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তাই শিশুদের অতিরিক্ত গোলমরিচ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

রক্ত সঞ্চালন

অতিরিক্ত মাত্রায় গোলমরিচ খাওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন এর বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং শরীরের কোন জায়গায় কেটে গেলে সেখান থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডায়াবেটিস

যারা ডায়াবেটিসের রোগী, তারা যদি ডায়াবেটিস এর ওষুধ সেবন করে থাকেন সেই ক্ষেত্রে তাদের গোলমরিচ খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। ডায়াবেটিসের রোগীরা ঔষধ ও গোলমরিচ একসাথে খাওয়ার ফলে শরীরে নানান রকমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।


এলার্জি

যাদের শরীরে সাধারণ কিছু খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রবণতা দেখা দেয় তারা প্রথমবার ও অতিরিক্ত মাত্রায় গোলমরিচ খাওয়ার ফলে এলার্জির প্রবণতা দেখা দিতে পারে। প্রিয় পাঠক এই ছিল গোলমরিচ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই জনসচেতনতার ক্ষেত্রে পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করবেন।

গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক গোলমরিচ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে তো জানলেন তবে গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন। সুপ্রিয় পাঠক আর দেরি না করে চলুন গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

স্বাস্থের উপকারিতার জন্য একটি মানুষের দিনে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ দানা গোলমরিচ এবং এক থেকে সর্বোচ্চ দুই চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়ো বেশ উপকারী। এর অধিক মাত্রায় খাওয়ার ফলে মিলবে অপকারিতা। গোলমরিচ চিবিয়ে খেতে পারেন আবার মিহি গুড়া করে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে পারে।

গোলমরিচ সাধারণত খাবার এর স্বাদ বৃদ্ধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন তৈরি তরকারিতে, বিরিয়ানি, মাংস, মাছ, পোলাও, ভুনা এইগুলো রান্নার ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার করা হয়। প্রিয় বন্ধুগণ এই ছিল গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আশা করি ইতিমধ্যে আপনারা জেনে গিয়েছেন।

সাদা গোলমরিচ

সাদা গোলমরিচ, এই মসলার প্রচলন বা ব্যবহার তেমন একটা নেই বললেই চলে। কারণ অনেকেই মনে করেন সাদা গোলমরিচ এর থেকে কালো গোলমরিচ ভালো। বন্ধুগণ এটি একেবারেই ভুল ধারণা, পার্থক্য শুধু রঙ্গে। কালো গোল মরিচ ও সাদা গোলমরিচ এই দুই উপাদানটির স্বাধ ও গন্ধ কিছুটা এক ও অভিন্ন।


সাদা গোলমরিচ এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো। সাদা গোলমরিচ খাওয়ার ফলে আর্থ্রাইটিস এর সমস্যা কমায়, ওজন কমায়, মাথা ব্যথা দূর করে, গলায় খুসখুশি ও কাশি সারায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, দাঁতের ব্যথা কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা দূর করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, মাথা ব্যথা দূর করে, হার্ট ভালো রাখে ইত্যাদি।

শেষ কথা

বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।

অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ গোলমরিচ এর উপকারিতা ও অপকারিতা এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url