ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ২০ টি পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম
ভূমিকা
ধুনিয়া বীজ এর বৈজ্ঞানিক নাম কোরিয়ানড্রাম, সেটাইভাম। ধুনিয়া বীজ সাধে ও গন্ধে
এর জুড়ি মেলা ভার। ধুনিয়া বিজে রয়েছে নানান রকমের পুষ্টিগুণ। বিশেষজ্ঞদের তথ্য
অনুসারে রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি ছাড়াও এটি শরীরের অনেকগুলো রোগ নিরাময় করে। ধনিয়া
বীজ খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম নিয়ে হাজির হয়েছি।
প্রিয় পাঠক, আশা করি ভালই আছেন। প্রতিদিনের মতো আজকেও আরও একটি নতুন ব্লগ
আর্টিকেল নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আজকের আর্টিকেলটি মূলত ধনিয়া বীজ
খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা ২০ টি পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম নিয়ে। এই আর্টিকেলের
রয়েছে, ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা, ধনিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা, ধনিয়া বীজ
খাওয়ার নিয়ম ইত্যাদি।
ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক, অনেকেই ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা গুগলে ইউটিউবে খোঁজাখুঁজি করেন,
তাই আমি আজকে আপনাদের মাঝে ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে হাজির হয়েছি। ধনিয়া
বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে নিচের
লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি
ধুনিয়া বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ লিভার ও তন্ত্রের কাজ সঠিকভাবে করতে
সাহায্য করে। ধনিয়া হজমের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম ও রস তৈরি করতে সাহায্য করে।
তাই যাদের হজম শক্তি দুর্বল তারা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ধুনিয়া বীজ খেতে পারেন।
ব্যাকটেরিয়া নিরাময়
ব্যাকটেরিয়ার কারণে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া ইত্যাদি খাদ্য বাহিত ও
পানিবাহিত রোগের আক্রমণ ও সংক্রমণ ধরে। ধুনিয়া বীজ ব্যাকটেরিয়া নিরাময় করে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে ধুনিয়া বীজ অনেক উপকারী। ধনিয়া শরীরের ইনসুলিন উপাদান
থেকে রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে। ধনিয়া রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়
এবং উপকারী কোলেস্টরেল পরিমাণ বাড়ায়।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ
ধুনিয়া বীজে ভিটামিন ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন যার ফলে আমাদের
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে। বেশি বেশি আয়রনের জন্য বিশেষ করে মহিলাদের খাদ্য
তালিকায় অন্যান্য সুষম খাদ্যর পাশাপাশি ধুনিয়া বীজ ও ধনিয়া পাতা থাকা খুবই
জরুরী। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ও আয়রন স্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বিষাক্ত ধাতুর ক্রিয়া প্রতিরোধ
সিসা, আর্সেনিক, অ্যালুমিনিয়াম, বারুদ এর মত বিষাক্ত ধাতু কোনভাবে মানুষের শরীরে
প্রবেশ করলে নানান রকমের রোগ সৃষ্টি হতে পারে। অ্যালজাইমার, প্রীতি ও দৃষ্টি
শক্তি কমে যাওয়া, কাটি ও ভাস্কুলার মিলন এর ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার মত বিভিন্ন
মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিষাক্ত ধাতুর ক্রিয়া প্রতিরোধ করতে আমরা
অবশ্যই ধুনিয়া বীজ খেতে পারি।
জ্বর সর্দি কাশির প্রকোপ কমায়
ধুনিয়া বীজে হয়েছে, ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি। এই
উপাদান গুলো সব কয়টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ঠান্ডা লাগা, জ্বর সর্দি কাশির
প্রকোপ কমায়।
ধুনিয়া বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট। আমরা অনেকেই জানি
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে
মৌসুমী নানান রকমের রোগ প্রতিরোধ করতে নিয়মিত ধুনিয়া বীজ সেবন করুন।
ত্বকের যত্ন
ত্বকের একজিমা, চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং প্রদাহে মত সমস্যা কমাতে দারুন কাজে আসে
ধুনিয়া বীজ। এক মুঠো ধুনিয়া বীজ পেস্ট বানিয়ে ত্বকে ও ক্ষতস্থানে লাগান
দেখবেন অল্প দিনের মধ্যে ক্ষতস্থান এর ঘা শুকাতে শুরু করবে।
চুলের যত্ন
চুল বৃদ্ধি ও চুল শক্ত পুক্ত করতে ধুনিয়া বীজ এর উপকারিতা অপরিসীম। গবেষকদের
তথ্য অনুসারে ধুনিয়া বীজ বেটে চুলে লাগিয়ে বেশ কিছুক্ষণ রাখলে চুলের খুশকি
দূর হবে, চুলের গোড়া শক্ত হয় পাশাপাশি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
মুখের দুর্গন্ধ
মুখের দুর্গন্ধ থাকলে প্রতিদিন অল্প একটু করে ধনিয়া বীজ খেতে পারেন। এই ধনিয়া
বীজে এমন কিছু উপাদান থাকে যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সতেজ রাখে পাশাপাশি মুখের
দুর্গন্ধ দূর করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
ধনীয়া বীজে কেনেলিন নামক উপাদান রয়েছে। তাই ধনিয়া বীজ খাওয়ার ফলে
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ছোট বাচ্চাদের ধনিয়া বীজ খাওয়ানো অভ্যাস করুন এতে
তাদের ছোট থেকেই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
ধনিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা
প্রিয় পাঠক আমরা সকলেই জানি যে কোন খাবার এর উপকারিতার পাশাপাশি স্বল্প পরিমাণ
হলেও অপকারিতা থাকে। এতক্ষণ আপনারা ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য জানলেন। এবার আপনারা ধনিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে
জানতে হলে নিচের লেখাগুলো ধৈর্য ও মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকোন।
গর্ভাবস্থায়
গর্ভবতী মা অথবা বুদ্ধ প্রদানকারী মা খাবারের সাথে স্বাভাবিক মাত্রায় ধুনিয়া
বীজ খেতে পারেন। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ধুনিয়া বীজ অথবা ধুনিয়া বীজ এর চা
খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
এলার্জি
ধুনিয়া বীজ খাওয়ার ফলে অনেকের এলার্জি হতে পারে। আপনার ধুনিয়া বীজ ফলে যদি
এলার্জি হয় তাহলে ধুনিয়া বীজ খাওয়া থেকে দূরে থাকুন।
ব্লাড সুগার
আপনার যদি ব্লাড সুগার কম থাকে তাহলে ধুনিয়া বীজ খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। অথবা
আপনার যদি হাই ব্লাড সুগার থাকে আর তার জন্য যদি ইনসুলিন বা মেডিসিন নিতে হয়
তাহলে ধুনিয়া বীজ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তার দের সাথে পরামর্শ করে নিন।
ব্লাড প্রেসার
ধুনিয়া বীজ ব্লাড প্রেসার কমায়। আপনার যদি ব্লাড প্রেসার কম থাকে তাহলে
ধুনিয়া বীজ খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। অথবা আপনার যদি হাই ব্লাড প্রেসার থাকে
তার জন্য মেডিসিন সেবন করেন তাহলে অবশ্যই ধুনিয়া বীজ খাওয়ার আগে ডাক্তার দের
সাথে পরামর্শ করবেন।
সার্জারি করার আগে ওপরে
সার্জারি করার আগে ও পরে ধুনিয়া বীজ ও ধনেপাতা না খাওয়াই উত্তম। কারণ ধনে
থেকে আপনার ব্লাড সুগার কমে যেতে পারে। তার জন্য সার্জারি করার সময় সমস্যা হতে
পারে।
শ্বাসকষ্ট
যাদের জন্মগত শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের ধনিয়া বিজ ও ধনিয়া পাতা খাওয়া মারাত্ম
ক্ষতি হতে পারে। কারণ, ধনিয়া হঠাৎ করে শ্বাস প্রশ্বাস কে বাড়িয়ে দায়। আবার
ফুসফুসে নতুন করে অ্যাজমার সমস্যা সৃষ্টি করে। শ্বাস কষ্টের রোগীরা ধনিয়া খেলে
ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ত্বকের সমস্যা
গবেষকদের তথ্য অনুসারে অতিরিক্ত মাত্রায় ধনিয়া বীজ বা ধনিয়া পাতা খাওয়ার
ফলে ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে। ধনিয়া বিজে যে প্রোটিন হয়েছে তার শরীরে আইজি
নামক এন্টিবডি তৈরি করে। যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান কে সমানভাবে বহন
করে কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করে।
ধনিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ আপনারা ধনিয়া বীজ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য জানলেন। শুধু উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানলে হবে না,
ধনিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। সঠিক নিয়মে খেলে মিলবে
উপকারিতা, আর অনিয়মিত অধিক পরিমাণে খাওয়ার ফলে মিলবে অপকারিতা। চলুন ধনিয়া
বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ধনিয়া বীজ খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে
থাকে, পানের স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়ে থাকে, বড় বড় রেস্টুরেন্ট ও বিয়ে
বাড়িতে খাবার শেষে মুখের দুর্গন্ধ ও খাবার হজম হওয়ার জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে
ইত্যাদি। তবে আমরা যদি এটিকে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে কেমন করে ব্যবহার করব চলুন
জেনে নিন।
বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে, একজন সুস্থ মানুষ দিনে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মুঠো
ধনিয়া বীজ খেতে পারেন। এটি খালি চিবিয়েও খেতে পারেন। আবার একটি গ্লাসে একমুঠো
ধনিয়া বীজ পানিতে সারারাত ভিজে রাখুন সকালে ছেকে খালি পেটে খেয়ে নিন। এতে নান
রকমের রোগ নিরাময় হয়। অথবা একমুঠো ধনিয়া বীজ পানিতে অল্প তাপমাত্রায়
কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন।
পানির রং পরিবর্তন হয়ে এলে এটি চা এর মত পান করুন, এতে আপনার শরীরের বিভিন্ন
রোগ প্রতিরোধ হবে। প্রিয় পাঠক আমরা অনেকেই জানি অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া
আমাদের শরীরের পক্ষে বয়ে আনবে নানান রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তাই ধনিয়া বীজ
অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শেষ কথা
বন্ধুগণ, শেষ কথাই আজকে আমার এই আর্টিকেলটি ছিল ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা
অপকারিতা ২০ টি পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম এই সকল তথ্য আশা করি আপনি এই আর্টিকেলে
সঠিক তথ্য খুঁজে পেয়েছেন। কোনো কিছু বুঝতে না পারলে বা কোনো তথ্য জানার থাকলে
আমাদের সাথে
যোগাযোগ করতে পারে।
অনলাইন জগতে সীমা আইটির অবদান হবে
অপরিসীম, এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার
ভালো লেগে থাকে তাহলে জনসচেতনতার ক্ষেত্রে আপনার পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবীর
কাছে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
শেষ কথা আপনাদের যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে
দিবেন। এতক্ষণ আমাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে থেকে ধনিয়া বীজ খাওয়ার উপকারিতা
অপকারিতা ২০ টি পুষ্টিগুণ খাওয়ার নিয়ম এর সমস্ত তথ্য পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য
ধন্যবাদ। প্রতিদিন এরকম নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট
ফলো
করুন, ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url